একবছরেও দেয়া হয়নি সাংবাদিক আরিফুল নির্যাতন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন


একবছরেও দেয়া হয়নি সাংবাদিক আরিফুল নির্যাতন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন

সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানের উপর ভয়াবহ নির্যাতনের ঘটনার এক বছর পেরিয়ে গেলেও মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়নি। কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের নামে জেলা প্রশাসনের একটি পুকুরের নামকরণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় তার ওপর নেমে এসেছিল খড়গ। 

আরিফুল ইসলাম রিগান অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি। 

২০২০ সালের ১৩ মার্চ মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে মারধর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় আরিফুল ইসলামকে। এরপর একবার এনকাউন্টার দেওয়ার চেষ্টা, আবার সিদ্ধান্ত পাল্টে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এনে বিবস্ত্র করে মারধর ও নির্যাতনের পর মিথ্যা মামলায় তাকে পাঠানো হয় কারাগারে। 

সে ঘটনায় সাবেক জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনসহ তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে করা ফৌজদারি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন এক বছরেও জমা পড়েনি আদালতে। গত এক বছরে চারদফা তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ বদলালেও, মামলাটি এখনও তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। 

এতগুলো দিনেও নিজের ওপর হওয়া নির্যাতন ও অন্যায়ের বিচার না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন নির্যাতিত সাংবাদিক আরিফ। তিনি বলেন, ‘আসামিরা ক্ষমতাশালী হওয়ায় বিভিন্নভাবে মামলাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। মামলা মীমাংসার জন্য আমাকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য। শুধুমাত্র একটি প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশ করার কারণে আমার ওপর যে অন্যায় ও বর্বরোচিত নির্যাতন হয়েছে আমি তার বিচার চাই। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই’।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) গোলাম মর্তুজা বলেন, ‘সদ্য বিদায়ী তদন্ত কর্মকর্তার স্থলাভিষিক্ত হলেও এখনও মামলার ডকেট বুঝে পাইনি। ডকেট বুঝে পেলে মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে বলতে পারবো।’

কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খান মো. শাহরিয়ার বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বেশ কিছু সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। আমরা কিছু সাক্ষীকে চিঠি দিয়ে ডেকেছি।’ 

তবে ব্যস্ত থাকার কথা জানিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি ওসি।

জানা যায়, জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন একটি পুকুর সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করতে চেয়েছিলেন। আরিফুল এ বিষয়ে নিউজ করার পর থেকেই তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন ডিসি। জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে রিপোর্ট করতে চেয়েছিলেন সাংবাদিক আরিফ। এ বিষয়ে জানতে পেরে জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে তাকে বেশ কয়েকবার ডেকে নিয়ে সতর্ক করা হয়।

এই ঘটনায় কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এসএম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়। পরে ওই সাজার বৈধতা নিয়ে গতবছরের ১৫ মার্চ বাংলা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক হারুন উর রশীদ জনস্বার্থে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি রিট দায়ের করেন।