আটক লেখক ও সংবাদকর্মীদের মুক্তির দাবি সম্পাদক পরিষদের

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার সব সাংবাদিক ও লেখকের মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ। সেই সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের দাবিও জানান তারা।

শনিবার এক বিবৃতিতে তারা এসব দাবির কথা জানান।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিকদের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতনের হাতিয়ার- এমন অভিযোগ করে সম্পাদক পরিষদ বলে, “আইনটি তৈরির সময়ই এর অপপ্রয়োগের আশঙ্কা করা হয়েছিল। তারা বলেছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেই আশঙ্কার চেয়েও আইনটিকে কঠিনভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে।“

১০ মাস কারাবন্দী থাকার পর কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে জামিন দেওয়ায় আদালতকে ধন্যবাদ জানান সম্পাদক পরিষদ। তবে জামিন পেলেও তার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দয় আচরণকে ‘অনভিপ্রেত’ বলেছে পরিষদ।

সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের ‘নিখোঁজ’ হওয়া এবং পরে দীর্ঘ কারাবাস সম্পর্কে উদ্বেগ জানিয়ে সম্পাদক পরিষদ বলেছে, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি লেখা শেয়ার দেওয়ার কারণে সাংবাদিক কাজলকে দীর্ঘদিন নিখোঁজ ও কারাগারে থাকতে হয়েছে। পরে জামিন পেলেও তার বিরুদ্ধে মামলাগুলো চলমান রয়েছে। আর্থিক, শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত কাজলকে মামলা মোকাবিলা করতে হচ্ছে।“

যুক্তরাজ্যভিত্তিক মিডিয়া ওয়াচডগ বডি আর্টিকেল ১৯-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৯৮টি মামলায় ৪৫৭ জনকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ৪৫৭ জনের মধ্যে ৭৫ জন সাংবাদিক। তাদের মধ্যে ৩২ জনকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে।

এদিকে, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আইনটি পর্যালোচনা করা হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে তদন্তের আগেই যেন গ্রেপ্তার করা না হয়, এমন ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে সম্পাদক পরিষদ বলেছে, দ্রুত অধ্যাদেশ জারি করে একে আইনগতভাবে কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হোক।

পরিষদ আরও বলেছে, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া তৈরি, মন্ত্রিসভায় অনুমোদন, সংসদে বিল উত্থাপন ও রাষ্ট্রপতির সইয়ের আগে ও পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সম্পাদক পরিষদ এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থা আপত্তি তুলেছিল। সরকারের পক্ষ থেকে কয়েকজন মন্ত্রী ও সংসদীয় কমিটির সদস্যরা আমাদের সঙ্গে বৈঠক করে আপত্তিগুলো শুনেছিলেন। শেষে দেখা যায়, আমাদের দাবিগুলো পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। এমনকি এই আইন প্রণয়নের সময় সংসদে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর বক্তব্য এবং সংসদীয় কমিটির পেশকৃত প্রতিবেদন সম্পর্কে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে আলোচনায় অংশগ্রহণকারী গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের মতামতও বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।“

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আপত্তিকর ধারাগুলো সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা সেগুলো সংশোধনের সুপারিশ করেছিলেন। সম্পাদক পরিষদ মনে করে, সেগুলো বিবেচনায় নেওয়া হলে আজকের এ পরিস্থিতি হয়তো উদ্ভব হতো না।