মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ


মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দী অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। তাঁরা এই মৃত্যুকে ‘রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। একই সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।

আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। বেলা এগারোটায় প্রগতিশীল ছাত্র জোট, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ও সাধারণ নাগরিক ও শিক্ষার্থীরা মিছিল করেন। মিছিল শেষে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় বাম ছাত্র সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করেন, দুর্নীতি-লুটপাটের প্রতিবাদ করেছিলেন লেখক মুশতাক। তাঁর অপরাধ ছিল, তিনি সাধারণ মানুষের পক্ষে, অব্যবস্থাপনা-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। কারাগারে আটকে তাঁকে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি ছয়বার জামিনের আবেদন করলেও তা নির্বিকারভাবে নাকচ করা হয়েছে। মানুষের অধিকারকে অস্বীকার করার জায়গায় চলে গেছে বর্তমান সরকার।

প্রতিবাদ চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও..

মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ব্যাপক সমালোচনা ও প্রতিবাদ চলছে। বাক স্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তার পক্ষে ওয়ালে ওয়ালে প্রতিবাদী স্ট্যাটাস দেখা গেছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রীয়াজ তার ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, "... মুসতাক কীভাবে মারা গেছেন তাঁর চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে তিনি রাষ্ট্রের হেফাজতে ছিলেন, তাঁর দায়িত্ব নিয়েছিল সরকার- এই মৃত্যুর দায়- হত্যার দায় সরকারের...।"

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক লিখেছেন, "মুশতাক জেলে মারা গেছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে তাকে জেলে পাঠানো হয়েছিলো। তার অপরাধ ছিলো লেখালেখি করা, অন্য কিছু নয়।"

মাহা মির্জা নামে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক লিখছেন, “ফ্রি কিশোর ফ্রি মুশতাক হ্যাশট্যাগ দিয়ে এতদিন নাকি- কান্নাকাটি করেছি। আর করতে হবেনা। মুশতাক আহমেদ মরে গেছে। বাকি আর যারা যারা জেলে আছে কিশোরসহ, সবাইকে মেরে ফেলা হোক। কেউ কথা বলবেনা এই দেশে। কেউ আঁকবেনা, কেউ লিখবে না। সকলের মৃত্যু হোক।“

তরুণ কবি সৈকত আমিন লিখেছেন-“পথেঘাটে চত্বরে যারা আছো আজো চুপ করে-
তোমাদের নীরবতায় বাজে সন্ত্রাসের জয়গান।
জীবনের দৈর্ঘ্য তবে কী বুলেটের সমান?”

শহীদ সাংবাদিক আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ ভারাক্রান্ত মনে লিখেছেন, “দেশ জয় করে আনা অতি চেনা মানুষগুলো যখন নচ্ছর কবি গোলাম আযমের জীবনী লেখা শিবির বান্ধব আল মাহমুদের জয়গানে মুখে ফ্যানা তোলে, তখন মনে হয় ক্রোকোডাইল মোশতাক বোকা ছিলেন। 
ডিজিটাইল আইন বাতিল, কার্টুনিস্ট কিশোরকে মুক্ত করো, ক্রোকোডাইল মোশতাকের মৃত্যুর বিচার চাই বা তার স্ত্রী লিপা ভাবী মানসিক রোগী হলো কেন, এমন বহু কিছুর প্রতিবাদ করতে চাই না আর। 
যার যায়, 
সে শুধু জানে হায়, 
যে হারায়..“

২০২০ সালের মে মাসে পুলিশ জনপ্রিয় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর এবং লেখক মুশতাক আহমেদকে ঢাকার বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। তাদের বিরুদ্ধে "ফেসবুকে করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানো", "জাতির জনকের প্রতিকৃতি", "জাতীয় সংগীত" এবং "জাতীয় পতাকাকে" অবমাননার অভিযোগ আনা হয়।