সামিয়া রহমানের গবেষণা জালিয়াতির বিষয়ে শুনানি রবিবার


সামিয়া রহমানের গবেষণা জালিয়াতির বিষয়ে শুনানি রবিবার

ছবি : সংগৃহীত

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমানের গবেষণা জালিয়াতির বিষয়ে শুনানি আগামী ২৪ অক্টোবর, রবিবার অনুষ্ঠিত হবে। গবেষণা জালিয়াতি সংক্রান্ত যাবতীয় নথি ও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাইকোর্টে আসার পর শুনানির তারিখ ঘোষণা করেন আদালত।

গবেষণা জালিয়াতি সংক্রান্ত যাবতীয় নথি ও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাইকোর্টে আসার পর শুনানির তারিখ ঘোষণা করেন আদালত।

এর আগে গবেষণা জালিয়াতির অভিযোগে পদাবনতি হলে এ বছরের ৩১ আগস্ট পদাবনতি বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন সামিয়া রহমান। পরে ৫ সেপ্টেম্বর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমানকে পদাবনতি দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

একইসঙ্গে সামিয়া রহমানের গবেষণা জালিয়াতি সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট, গঠিত ট্রাইব্যুনালের নথিসহ সব কাগজপত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। এছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

এই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২১ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার শুনানি হবার কথা থাকলেও বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ‘নট টুডে’ (শুনানি আজ নয়) বলে আদেশ দেন।

আদালতে সামিয়া রহমানের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট নাঈম আহমেদ।

এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট নাঈম আহমেদ বলেন, ‘জালিয়াতির অভিযোগ ওঠা ওই গবেষণা নিবন্ধের রিভিউ, জালিয়াতি অনুসন্ধানকারী কমিটির প্রতিবেদন ও জালিয়াতির শাস্তি নির্ধারণে গঠিত ট্রাইব্যুনালের সুপারিশ প্রতিবেদন আকারে হাইকোর্টে এফিডেভিট করেছি’।

আগামী রবিবার এই প্রতিবেদন শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবেও বলে জানান তিনি।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সামিয়া রহমান ও মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘এ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার : এ কেস স্ট্যাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ শিরোনামের আট পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ’ জার্নালে প্রকাশিত হয়।

সেখানে ১৯৮২ সালের শিকাগো ইউনিভার্সিটির জার্নাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি’তে প্রকাশিত ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ নামের একটি নিবন্ধ থেকে প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠা হুবহু নকল করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এক লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এই চুরির কথা জানিয়েছিল ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস। সেসময় শুধু মিশেল ফুকোই নন, বুদ্ধিজীবী অ্যাডওয়ার্ড সাঈদের ‘কালচার অ্যান্ড ইমপেরিয়ালিজম' গ্রন্থের পাতার পর পাতাও সামিয়া ও মারজান হুবহু নকল করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

এই অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরিন আহমেদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে গত বছর ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়।

তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত জানুয়ারি মাসে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সামিয়া রহমানকে গবেষণা প্রবন্ধ চুরি করার শাস্তি হিসেবে সহযোগী অধ্যাপক থেকে এক ধাপ নামিয়ে সহকারি অধ্যাপক করে দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কমিটি।

একইসঙ্গে অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানকেও একই শাস্তি দেয়া হয়।

অভিযোগ আর শাস্তির পরিপ্রেক্ষিতে সামিয়া রহমান সেসময় এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, তাকে ফাঁসানো হয়েছে।

এ বছরের ১ মার্চ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তার অবস্থানের স্বপক্ষে বিভিন্ন যুক্তি ও তথ্য প্রমাণ উপস্থান করেন তিনি। সেসময় নিজেকে প্রতিহিংসা আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতির নোংরামির শিকার বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 

ফাইল ছবি

এছাড়া, এ বছরের ৩১ মে শিকাগো জার্নাল থেকে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ পাঠানো অ্যালেক্স মার্টিন নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন সামিয়া। মামলার অভিযোগ বলা হয়, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে সামিয়া রহমান এবং ক্রিমোনলজি বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের বিরুদ্ধে প্লেজারিজমের অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

তদন্ত কমিটি শিকাগো জার্নালের একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর যে ই-মেইলের ভিত্তিতে সামিয়া রহমানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক থেকে অবনমিত করে সহকারী অধ্যাপক করে শাস্তির সুপারিশ করে সে ই-মেইল সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভুয়া, বানোয়াট এবং সৃজিত।

আরও বলা হয়, ওই তারিখে শিকাগো জার্নাল থেকে অফিসিয়ালি সামিয়া রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কোনো ই-মেইল কখনোই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ই-মেইলে পাঠানো হয়নি। অ্যালেক্স মার্টিন বলে শিকাগো জার্নালে কেউ কখনো কাজ করেনি। এমনকি শিকাগো প্রেসেও অ্যালেক্স মার্টিন বলে কোনো ব্যক্তি নেই।