‘মাসে ৭০ ঘন্টার বেশি নেটফ্লিক্সে থাকেন বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরা’


‘মাসে ৭০ ঘন্টার বেশি নেটফ্লিক্সে থাকেন বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরা’

ছবি : সংগৃহীত

২০১৯ সালের ডিসেম্বর। চীনের উহানে শনাক্ত হয় প্রথম করোনা রোগী। এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে, শুরু হয় আতংক। প্যানডেমিক থেকে লকডাউন। সবাই যখন ঘরবন্দী, অনেকটা অস্থির, তখনই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ওভার দ্যা টপ-ওটিটি প্ল্যাটফর্ম।

তখন থেকেই প্রযোজক ও পরিচালকরা সিনেমা হলের বিকল্প হিসেবে ভাবতে থাকেন ওটিটিকে। যতোগুলো ওটিটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে তারমধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় নেটফ্লিক্স। কন্টেন্ট ক্রয়ের পাশাপাশি তাদের রয়েছে বেশকিছু নিজস্ব প্রযোজনা। সব মিলিয়ে সিনেমাপ্রেমীদের কাছে এখন সবচেয়ে বড় সিনেমা হলে পরিণত হয়েছে নেটফ্লিক্স।

করোনাকালীন চুটিয়ে ব্যবসা করেছে নেটফ্লিক্স। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নেটফ্লিক্সের সাথে যুক্ত হয়েছেন প্রায় ২০৯ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার। শুরু থেকেই বিশ্বজুড়ে ছিল এই ওটিটির জনপ্রিয়তা। কিন্তু এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায় করোনার সময়ে। 

করোনার সময়ে বাংলাদেশে নেটফ্লিক্সের ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করেছেন দুই গবেষক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জহির উদ্দিন আরিফ এবং মার্কেটিং গবেষক কাজী তুরিন রহমান। তাদের গবেষণার মূল প্রতিপাদ্য ছিল করোনা মহামারির সময়ে নেটফ্লিক্স দেখার প্রভাব। তাদের গবেষণায় উঠে আসে এই মহামারিতে মানুষ কতোক্ষণ সময় ব্যবহার করেছেন নেটফ্লিক্স দেখতে, এই নেটফ্লিক্স দেখার ফলে কী কী ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো ঘটেছে। গবেষণাটি সাউথ এশিয়ান জার্নাল অব মার্কেটিং-এ প্রকাশ করা হয়।

২০ থেকে ৩৪ বছরের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের ওপর করা হয় গবেষণাটি। এসময় তারা দেখেন করোনা মহামারিতে বাংলাদেশে নেটফ্লিক্স ব্যবহারকারীরা প্রতি মাসে ৭০ ঘন্টার বেশি সময় ব্যয় করেন। এছাড়া, অনেকেই টানা ছয় ঘন্টার বেশি সময় ধরে নেটফ্লিক্স ব্যবহার করেছেন।

 

ছবি : সংগৃহীত

এদিকে, সবচেয়ে বেশি প্রায় ৬৫.৭ শতাংশ মানুষ নেটফ্লিক্স দেখেছেন স্মার্টফোনে। এরপরে ল্যাপটপে দেখেছেন প্রায় ৪৫.৭ শতাংশ ব্যবহারকারী। এরপর যথাক্রমে দেখা হয়েছে ডেস্কটপ, টেলিভিশন ও ট্যাবলেটে।

মহামারিতে নেটফ্লিক্স ব্যবহার করেন প্রায় ৫২ শতাংশ ব্যবহারকারী মোটামুটি সন্তুষ্ট ছিলেন। আর প্রায় ৩৩ শতাংশ ব্যবহারকারী ছিলেন অনেক বেশি সন্তুষ্ট।

করোনা মহামারিতে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে নেটফ্লিক্স। একই সাথে লাভবান হয়েছে আর্থিক গেটওয়ে পেমেন্ট সার্ভিসগুলোও। এছাড়াও মহামারিতে ঘরে থেকে মানুষ যখন বিরক্ত, তখন ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো মানুষকে বিনোদনের খোরাক জুগিয়েছে বলেও গবেষণায় উঠে আসে।

 

ছবি : সংগৃহীত

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক জহির উদ্দিন আরিফের সাথে বিজেসি নিউজের কথা হয়। তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারিতে নেটফ্লিক্সের পাশাপাশি অন্যান্য পেমেন্ট গেটওয়েগুলোও লাভবান হয়েছে। এতে আর্থিকভাবে অনেকেই লাভবান হয়েছেন’। তাছাড়া, টেলিকম কোম্পানিগুলোও লাভবান হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, এই গবেষণায় নেটফ্লিক্স ব্যবহারের কিছু নেতিবাচক দিক উঠে এসেছে। আরেক গবেষক কাজী তুরিন রহমান বিজেসি নিউজকে বলেন, ‘টানা নেটফ্লিক্স দেখার ফলে ব্যবহারকারীদের মাঝে বেড়েছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। একই সাথে মানসিকভাবেও কিছুটা চাপে থেকেছেন তারা’। অনেকের ঘুমের সমস্যা হয়েছে বলেও জানান তিনি। 

তিনি আরো বলেন, ‘টানা নেটফ্লিক্স দেখায় ব্যবহারকারীদের মাঝে কিছু মানসিক পরিবর্তন এসেছে। যেমন অনেকেই ভেবেছেন এটিই শেষ পর্ব, তবে এরপরেই পরবর্তী পর্ব দেখা শুরু করেছেন। এরকম করে টানা না ঘুমিয়ে অনেকেই বিভিন্ন সিরিজ শেষ করেছেন। যা শারিরীক ও মানসিকভাবে ক্ষতিকর’।

গবেষকরা এই সমস্যাকে বলছেন ‘ওয়ান মোর সিন্ড্রম’। প্রায় ৬৫ শতাংশ ব্যবহারকারীর মাঝে এই সমস্যা দেখা গেছে। এছাড়াও নেটফ্লিক্স ব্যবহার আসক্তিতে ছিলেন প্রায় ৫৭ শতাংশ ব্যবহারকারী। প্রায় ৫৩ শতাংশ ব্যবহারকারীর ঘুমের সমস্যা হয়েছে। আর দু:শ্চিন্তা ও সময় নষ্ট করেছেন প্রায় ১৮ শতাংশ ব্যবহারকারী।

একজন দর্শক মাসে সিনেমা হলের পেছনে যে অর্থ ব্যয় করেন, তা দিয়ে এক বছরের নেটফ্লিক্সের পুরো ফি দেয়া যায়। শুধু তাই নয়, এতে রয়েছে কন্টেন্ট ডাউলোডের সার্ভার সুবিধা। অর্থাৎ, ইন্টারনেট সংযোগে ত্রুটি থাকলেও ডাউনলোড করা কন্টেন্টগুলো যেকোনো সময় দেখা যায়। 

নেটফ্লিক্স একটি মার্কিন বিনোদনধর্মী প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৭ সালের ২৯ আগস্টে এটি প্রতিষ্ঠা করেন রিড হ্যাস্টিংস এবং মার্ক রেন্ডোল্ফ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের লস গ্যাটস শহরে অবস্থিত জনপ্রিয় এই প্রতিষ্ঠানটির সদর দপ্তর।