'মনে হচ্ছিল যেন আমি একটা কবরের ভেতরে আছি'


'মনে হচ্ছিল যেন আমি একটা কবরের ভেতরে আছি'

ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের কাছে নিখোঁজ থাকার সময়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল বলেছেন, 'মনে হচ্ছিল যেন আমি একটা কবরের ভেতরে আছি'। 

কারাগার থেকে মুক্তি পাবার পর, বুধবার ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারকে দেয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন, কাজল।  

তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকাকে তার নিখোঁজ হওয়ার সময়ের যেসব কথা তিনি বলেছেলেন তা সঠিক এবং সেটাই তার বক্তব্য।

সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল নিখোঁজ ছিলেন ৫৩দিন। এরপর তার সন্ধান পাওয়া গেলেও তাকে কারাগারে থাকতে হয়েছে সাত মাস। সাক্ষাৎকারে তিনি তার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা এবং নিখোঁজ থাকার সময়ের পরিস্থিতির বর্ণনা করেছেন।

জোর করে ধরে নিয়ে আটকে রাখার সময়ের বর্ণনা করতে গিয়ে ডেইলি স্টারকে কাজল বলেন, 'মনে হচ্ছিল যেন আমি একটা কবরের ভেতরে আছি। সেটা খুব ছোট একটা জায়গা ছিল, কোন জানালা ছিল না।'

গত বছর ১০ মার্চ নিখোঁজ হন শফিকুল ইসলাম কাজল। তেপ্পান্ন দিন পর বেনাপোল সীমান্তের কাছাকাছি এলাকা থেকে তাকে 'আটকের' তথ্য জানায় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী, বিজিবি।

এরপর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের তিনটি মামলায় কাজলকে কারাগারে পাঠানো হয়। মামলা তিনটি দায়ের করেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর ও যুব মহিলা লীগের দু'জন নেতা।

এরপরের সাত মাস বারবার জামিনের আবেদন করা হলে বারবারই তা নাকচ করে দিয়েছেন নিম্ন আদালত। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্ট থেকে তিনটি মামলায় জামিন হলে গত ২৫ ডিসেম্বর মুক্তি পান তিনি।

সাক্ষাৎকারে শফিকুল ইসলাম কাজল জানান, এখন হাঁটতে গেলে তার কষ্ট হয়, সারা শরীরে রাতের বেলায় ব্যথা হয় এবং মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো নয়। কিন্তু অন্তত নিজের বাড়িতে রয়েছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ডেইলি স্টারের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি কিছু কথা বলেছেন, কিন্তু অনেক কথাই বলতে চাননি বলে ওই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে।

শফিকুল ইসলাম কাজল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বেনাপোলে আমাকে ছেড়ে দেয়ার আগ পর্যন্ত, ৫৩ দিন ধরে আমার চোখ বাঁধা ছিল, মুখ আটকানো ছিল আর হাতে পেছন দিক থেকে হ্যান্ডকাফ লাগানো ছিল। আমি শুধুমাত্র দিন গুনতাম'।

'এটা অবর্ণনীয় ছিল। আমি আমার পরিবার সম্পর্কে চিন্তা করে আমার দিনগুলো কাটিয়েছি। আর ভাবতাম, আমি আবার তাদের কখনো দেখতে পাবো কিনা। আমার মনে হচ্ছিল, আমি মারাই গেছি, আর কোনদিন ফিরতে পারবো না,' সাক্ষাৎকারে বলেন এই ফটো জার্নালিস্ট।

কিন্তু কারা তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, কেন বা কোথায় তাকে আটকে রেখেছিল তা তিনি প্রকাশ করেননি। তার অপহরণকারীরা কী চেয়েছিল বা কিসের বিনিময়ে তাকে মুক্তি দিয়েছে, তাও তিনি জানাতে চাননি।

শফিকুল ইসলাম কাজল বলেন, 'আমি সম্ভবত ব্যক্তিগত শত্রুতার শিকার হয়েছি। এরা সরকারের খুব ছোট একটা অংশ মাত্র। পুরো প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অথবা সবাইকে দায়ী করা যাবে না।

'শুধুমাত্র যে কয়েকজন ব্যক্তি এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদেরই দায়ী করা যায়। আমি তদন্তকারীদের পরামর্শ দেবো, এই ব্যক্তিরা কারা, তারা সেটা খুঁজে বের করুক'।