যে কারণে শান্তিতে নোবেল জিতলেন দুই সাংবাদিক


যে কারণে শান্তিতে নোবেল জিতলেন দুই সাংবাদিক

ছবি : সংগৃহীত

 

গণতন্ত্র ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিকল্প নেই। প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও যারা মত প্রকাশের স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে লড়াই করে চলেছেন তারাই তো শান্তির প্রকৃত বাহক।

শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাহসিকতার সাথে কাজ করে যাওয়া ফিলিপাইন ভিত্তিক সংবাদ ওয়েবসাইট রেপলারের সহ প্রতিষ্ঠাতা মারিয়া রেসা ও রাশিয়ার বিরোধীমতের প্রধান সংবাদমাধ্যম নোভায়ে গাজেটার প্রধান সম্পাদক দিমিত্রি মুরাতভ এ বছর শান্তিতে জিতেছেন বিশ্বের সবেচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ নোবেল পুরস্কার।

৮ অক্টোবর, শুক্রবার নরওয়ের রাজধানী ওসলোতে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এই দুই সাংবাদিকের নাম ঘোষণা করে নোবেল প্রদান কমিটি।

নোবেল কমিটি এক বিবৃতিতে জানায়, মারিয়া রেসা ও দিমিত্রি মুরাতভ ফিলিপিন্স এবং রাশিয়ায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় সাহসী লড়াইয়ের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলেন।

 

মারিয়া রেসা

১৯৬৩ সালের ২ অক্টোবর ফিলিপিন্সের ম্যানিলায় জন্ম নেন মারিয়া রেসা। ২০১২ সালে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার স্বার্থে র্যাপলার নামে একটি ডিজিটাল মিডিয়া প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

২০১৬ সালে মাদকবিরোধী অভিযানের ঘোষণা দেন ফিলিপাইনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট দুতার্তে। অভিযানে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়াবহ দমন-পীড়ন ও বিপুল সংখ্যক হত্যাকাণ্ডের ফলে একসময় সেটি ফিলিপাইনের সরকার ও জনগণের মধ্যকার লড়াইয়ে রূপ নেওয়ার উপক্রম হয়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দম করতে ফিলিপাইন সরকার সে সময় ফিলিপাইনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ঢালাওভাবে ভুয়া সংবাদ ও তথ্য ছড়াতে শুরু করে। মারিয়া রেসা ও তার নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠান র্যাপলার এ বিষয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে সেসব প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করে। নোবেল বিজয়ে রেসার এ ভূমিকার বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে বলে জানিয়েছে নোবেল প্রদান কমিটি।

 

মারিয়া রেসা। ছবি : সংগৃহীত

নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে নিজের নাম শোনার ব্যপারটিকে আনন্দময় অপ্রত্যাশিত ঘটনা উল্লেখ করে রেসা বলেন, ‘এ বিশ্ব তথ্যে ভরপুর। কিন্তু তার মধ্যে সঠিক তথ্য বেছে নেয়া এবং জনগণকে তা জানানোই সাংবাদিকের কাজ। কাজটি যদি যথাযথভাবে না হয়, সেক্ষেত্রে সত্য ও আস্থাশীলতা বিপন্ন হতে বাধ্য’।

 

দিমিত্রি আন্দ্রেইভিচ মুরাতভ

রাশিয়ায় সামারায় ১৯৬১ সালে দিমিত্রি আন্দ্রেইভিচ মুরাতভের জন্ম। রাশিয়ার চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতে বাক স্বাধীনতা রক্ষায় নোভাজা গাজেটা নামক সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠাতা করেন তিনি। নোবেল কমিটি বলছে এটিই রাশিয়ার সবচেয়ে স্বাধীন সংবাদপত্র।

১৯৯৩ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে নাভায়া গেজেতা। রাশিয়ার সবচেয়ে নিরপেক্ষ সংবাদমাধ্যম হিসেবে ইতোমধ্যে স্বীকৃতি পেয়েছে পত্রিকাটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুর্নীতি, পুলিশি দমন-পীড়ন, অবৈধ গ্রেপ্তার ও আটক, নির্বাচনে কারচুপি, শিল্প কারখানায় অব্যবস্থাপনা, রুশ সেনাবাহিনীর দেশের অভ্যন্তর ও বাইরের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ইত্যাদির মতো বিষয়ে সমালোচনামূলক লেখা প্রকাশ করে আসছে নাভায়া গেজেতা।

 

দিমিত্রি আন্দ্রেইভিচ মুরাতভ। ছবি : সংগৃহীত

সততার সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য চরম মূল্য দিতে হয়েছে পত্রিকাটিকে। বিভিন্ন সময় রাশিয়ার ক্ষমতাসীন পক্ষের হয়রানি, হুমকি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন, নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। ১৯৯৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত পত্রিকাটির ছয়জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। তবে এতো কিছুর পরও মূলনীতি থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুতি ঘটেনি পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদক দিমিত্রি মুরাতভের। যা স্বীকৃতি হিসেবে শান্তিতে নোবেল জিতলেন তিনি।

বিজয়ী হিসেবে নিজের নাম শোনার পর বিষয়টিকে স্রেফ পাগলামো হিসেবে অ্যাখ্যা দেন দিমিত্রি মুরাতভ। এটি প্রত্যাশা করেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তবে এও সত্য, রাশিয়ায় সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে অতীতে যেসব দমনমূলক নীতি নেয়া হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে, তার একটি উপযুক্ত জবাব দেয়া হয়েছে এ ঘোষণার মাধ্যমে।’

 

নোবেল পুরস্কার ও সাংবাদিক

সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের নামানুসারে নোবেল পুরস্কারের নামকরণ করা হয়। তার উইল অনুযায়ীই নোবেল পুরষ্কার প্রদান করা হয়। ১৯০১ সাল থেকে সাহিত্য, পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, শান্তি ও অর্থনীতি এই ছয়টি বিষয়ে পুরস্কারটি প্রদান করা হয়ে আসছে। ২০২১ সালের ঠিক ৮৬ বছর আগে ইতিহাসে প্রথম এবং একমাত্র সাংবাদিক হিসেবে শান্তিতে নোবেল পেয়েছিলেন জার্মান সাংবাদিক কার্ল ভন ওজিয়েতস্কি। তারপর আবার এলো দুই সাংবাদিকের নাম।

নোবেল কমিটির মতে, স্বাধীন, এবং সত্যভিত্তিক সাংবাদিকতা ক্ষমতার অপব্যবহার, মিথ্যা এবং যুদ্ধের প্রচার থেকে রক্ষা করার কাজ করে। গণতন্ত্র এবং যুদ্ধের বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং তথ্যের স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত।