'ক্লিনফিডই রক্ষা করতে পারে দেশের গণমাধ্যম শিল্প'


'ক্লিনফিডই রক্ষা করতে পারে দেশের গণমাধ্যম শিল্প'

ছবি : সংগৃহীত

 

দেশের স্বার্থ রক্ষায় ক্লিনফিড সম্প্রচার বা বিদেশী চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবেনা, এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। দুপুরে বিদেশি চ্যানেল ক্লিনফিড সম্প্রচার ইস্যুতে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার-বিজেসির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের এ কথা জানান। ৫ অক্টোবর মঙ্গলবার, দুপুরে সচিবালয়ের তথ্য মন্ত্রণালয়ে এ মতবিনিময় হয়।

এসময় মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মঙ্গলবার, মানে আজকেও সময় দিচ্ছি, যেসব চ্যানেল ক্লিনফিড হিসেবে আসে সেগুলো চালানোর জন্য। যেসব চ্যানেল ক্লিনফিড আসা সত্ত্বেও চালানো হচ্ছে না সেজন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় আগামীকাল, বুধবার থেকে মোবাইল কোর্ট চালানো হবে। কেউ যদি কেবল অপারেটরের শর্ত না মানে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা আজকেও সময় দিচ্ছি’।

তিনি বলেন, ‘আমরা দেশ এবং দেশের মিডিয়া ইন্ড্রাস্ট্রির স্বার্থে আইন কার্যকর করেছি। এ আইন আশপাশের অনেক দেশে অনেক আগেই কার্যকর হয়েছে। আমাদের দেশের একটি মহল এ আইন কার্যকর করতে দেয়নি’।

বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্ত্রি ছড়ানোর কোনো সুযোগ নেই বলেও জানান তথ্যমন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, ‘শুধু একটি পক্ষ বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছে তা নয়, এটাকে পুঁজি করে আরও কেউ কেউ বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা করেছে। সেগুলো হালে পানি পায়নি’।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আইন কার্যকরের বিষয়ে আমরা এবার অত্যন্ত বদ্ধ পরিকর। আর কেউ বিভ্রান্তি ছড়ালে সেটির বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে’। এছাড়াও যেসব চ্যানেল ক্লিনফিড পাঠায় প্রথমে কেউ সেগুলো না চালালেও এখন চালানো শুরু করেছে বলে জানান তথ্যমন্ত্রী।

ক্লিনফিড নিয়ে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার- বিজেসিই প্রথম এই দাবি তোলে। সংগঠনটির প্রধান দাবিও ছিলো এই ক্লিনফিড। বিগত কয়েক বছর যাবতই সংগঠনটি এই দাবি নিয়ে সরকারের সাথে কথা বলে আসছিলো। তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীর সাথে মতবিনিময় সভায় ট্রাস্টির অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

এসময় বিজেসি চেয়ারম্যান ও মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তাপ্রধান রেজোয়ানুল হক ক্লিনফিডের বিষয়ে সরকার উদ্যোগ নেয়ায় ধন্যবাদ জানান। এছাড়া, ক্লিনফিডের পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মী আইন চালু করারও দাবি জানান বিজেসি চেয়ারম্যান। যা বিজেসির দীর্ঘদিনের অন্যতম প্রধান দাবি বলেও জানান তিনি।

২০০৬ সাল থেকে ‘ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন’, রয়েছে। এই আইন এতোদিনেও কার্যকর করা যায়নি। সরকার দীর্ঘদিন পরে হলেও আইনটি কার্যকরের উদ্যোগ নেয়ায় তথ্য মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানায় বিজেসি প্রতিনিধি দল।

মতবিনিময় সভায় ট্রাস্টি পর্ষদের মধ্যে সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, মানস ঘোষ, নুর সাফা জুলহাস, সাইফ ইসলাম দিলাল সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সভায় নির্বাহী পর্ষদের মিল্টন আনোয়ার, পারভেজ নাদির রেজা, আলমগীর স্বপন, তারিকুল ইসলাম মাসুমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে দেশে সম্প্রচারিত কোনো বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবেনা- তথ্য মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনা কার্যকর হয়েছে। বিজেসির দীর্ঘদিনের এই দাবি কার্যকর হওয়ার বিষয়টিকে স্বাগত জানায় ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার-বিজেসি।

১ অক্টোবর, শুক্রবার বিজেসি চেয়ারম্যান ও মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তাপ্রধান রেজোয়ানুল হক রাজা এবং বিজেসি সদস্য সচিব ও একাত্তর টিভির বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘২০০৬ সালের ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক কার্যক্রম পরিচালনা আইনে এই বিধান থাকলেও এর আগে কখনোই এটি কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বর্তমান তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীর সাহসী এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানায় ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার-বিজেসি। এতে দেশীয় টেলিভিশন চ্যানেল শিল্পের আর্থিক সংকট কমবে এবং উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সম্প্রচারকর্মীরাও এর সুফল পাবে বলে আশা করা হচ্ছে’। আরও সুফল পেতে অবিলম্বে গণমাধ্যমকর্মী আইন প্রণয়ন এবং এই শিল্পের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য পদক্ষেপ নেয়ারও আহ্বান জানানো হয় ওই বিবৃতিতে।

১ অক্টোবর, শুক্রবার থেকে বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনসহ অনুষ্ঠান প্রচার করে, এমন বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ রয়েছে। এতে করে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ দর্শক। আবার বিষয়টি নিয়ে অনেকটা সরকার এবং ক্যাবল অপারেটরদের মুখোমুখি অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে।

অন্যদিকে, বিজ্ঞাপনবিহীন বা ক্লিনফিড সরবরাহ করে এমন ২৪টি টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচার করতে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। ফলে অনেক জায়গাতেই বিবিসি, সিএনএন, আল জাজিরা, স্টার স্পোর্টস, টেন স্পোর্টস, ডয়চে ভেলের মত চ্যানেলগুলো আবার দেখতে পারছেন দর্শকরা।

কেবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের-কোয়াব জানায়, ৪ অক্টোবর বিকেলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে ২৪টি বিদেশি টিভি চ্যানেলের তালিকা পাওয়ার পরই সেগুলো তারা খুলে দিতে বলেছেন। সরকারি নির্দেশনা মানতে গিয়ে গত শুক্রবার, ১ অক্টোবর ৬০টির মতো বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় পরিবেশক ও কেবল অপারেটররা।

সম্প্রচার শুরু হওয়া চ্যানেলগুলো হল- বিবিসি, সিএনএন, আল জাজিরা এইচডি, ডিডাব্লিউ, কেবিএস ওয়ার্ল্ড, এআরআই র্যাংগ টিভি, এনএইচকে ওয়ার্ল্ড, সিজিটিএন, রাশিয়া টুডে, ফ্রান্স ২৪, লোটাস, ট্রাভেল এক্সপি এইচডি, আল কুরান, আল সুন্না, টেন স্পোর্টস, ডিসকভারি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, দুবাই স্পোর্টস, মাস্তি টিভি, বিফরইউ মিউজিক, এমটিভি, স্টার স্পোর্টস ১, স্টার স্পোর্টস-২, স্টার স্পোর্টস ৩, স্টার স্পোর্টস ৪।