আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস আজ


আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস আজ

ছবি : সংগৃহীত

 

২৮ সেপ্টেম্বর, ‘আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস’ আজ। দিবসটির স্লোগান ঠিক করা হয়েছে- ‘তথ্য আমার অধিকার, জানতে হবে সবার’। জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিবছর আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি উদযাপন করা হয়।

তথ্য অধিকার দিবস উপলক্ষে তথ্য কমিশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।

মানুষের তথ্য জানার ধারণাটি মানবসভ্যতার শুরু থেকেই পৃথিবীতে বিরাজমান। তবে তথ্য জানার অধিকার বা তথ্যে প্রবেশাধিকার অর্জন হয়েছে অনেক বিবর্তনের মাধ্যমে। ১৯৬৬ সালে সুইডেনে প্রথম তথ্য অধিকার প্রতিষ্ঠার আইন প্রণীত হয় এবং সেদেশে জনগণের তথ্যপ্রাপ্তির আইনি ভিত্তি রচিত হয়।

তারও অনেক পর ২০১২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়ায় বিশ্বব্যাপী মানুষের তথ্য অধিকার আন্দোলনে সম্পৃক্ত সব সংগঠন একত্রিত হয়ে FOI (Freedom of Information) Network গঠন করে। নেটওয়ার্কের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেয়, বিশ্বের সব দেশ ২৮ সেপ্টেম্বর নিজ নিজ পরিমণ্ডলে তথ্য অধিকার বিষয়ে নিজস্ব ধ্যান-ধারণা ও সাফল্যগাঁথা প্রচার করবে, যাতে সব মানুষের তথ্যে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হয়, স্ব স্ব দেশে প্রয়োজনীয় আইন, নীতিমালা, কাঠামো তৈরি হয় এবং এজন্য বাস্তবিক অর্থে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

অবশেষে ইউনেস্কো তার ৩৮ সি/৫৭ সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে প্রতি বছর ২৮ সেপ্টেম্বর ‘International Day for Universal Access to Information' (IDUAI) হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়। ইউনেস্কো IPDC’র তত্ত্বাবধানে ২০১৬ সাল থেকে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে।

ছবি : সংগৃহীত

এদিকে, দিবসটি উপলক্ষে এক বিবৃতিতে মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন জানিয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারির ১৮ মাসে বাংলাদেশে জনগণের তথ্য অধিকারের ক্রমাগত লঙ্ঘন ও সংকোচন নজিরবিহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৭ সেপ্টেম্বর, সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক অধিকার সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ বলছে,  মহামারির প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে একইরকম সমন্বয়হীনতা, কর্মপরিকল্পনায় অস্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার তীব্র অভাব বাংলাদেশে এই সঙ্কটকে গভীরতর করেছে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রের বিভিন্ন যন্ত্রের হাতে তথ্যের অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত, যা সরকার প্রতিশ্রুত টেকসই, স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণের পরিপন্থি প্রয়াস।

আর্টিকেল নাইনটিনের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘করোনাকালে সরকার নানা অজুহাত দেখিয়ে তথ্য পাওয়ার অধিকার ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করেছে। এমনকি করোনা ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য সেবা ও টিকা বিষয়ে সরকার অনেক সময় ভুল ও অসংগতিপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। স্বাস্থ্যখাতের চিহ্নিত অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে সরকার উল্টো সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ওপরই খড়গহস্ত হয়েছে। এজন্য ২০১৮ সালের নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ শত বছরের পুরনো দাপ্তরিক গোপনীয়তা আইনের অপব্যবহার হচ্ছে’। 

ছবি : সংগৃহীত

এছাড়াও বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করা হয়, আর্টিকেল নাইনটিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত, মত প্রকাশজনিত অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ ও  রেকর্ড করে। সংস্থাটি  ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া ১৭২টি মামলার ঘটনাও রেকর্ড করেছে।

এসব মামলায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৩০৮ জন ব্যক্তি অভিযুক্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে সাংবাদিক ৪১ জন। এছাড়াও বিচার প্রক্রিয়া নিষ্পন্ন না হওয়ায় এসব মামলার ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগ এখনো  গ্রেপ্তার-হয়রানির শিকার হচ্ছেন। 

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘তথ্য পাওয়া নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার। একইভাবে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা ও গোপনীয়তার সমান অধিকারও নাগরিকের রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে প্রায়ই ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে আড়ি পাতা এবং গোপন ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যাওয়ার মতো উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটছে। এরই মধ্যে প্রস্তাবিত ‘ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন’ ব্যক্তিতথ্য সুরক্ষার নামে বিরুদ্ধ মত নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবে ও স্বাধীন মতপ্রকাশ আরও বাধাগ্রস্ত করবে বলে জনমনে শঙ্কা তৈরি হয়েছে’।

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি) অন্যতম লক্ষ্যমাত্রা ১৬ (শান্তি, ন্যয়বিচার ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান) অর্জনে তথ্য অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতের কোন বিকল্প নেই উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সংবিধান জনসাধারণের তথ্য অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার সুরক্ষা দেয়। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র (ইউডিএইচআর) এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তিরও (আইসিসিপিআর) অন্যতম অনুস্বাক্ষরকারী দেশ’।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের করা এই অঙ্গীকারগুলো প্রতিপালনে সরকারকে সচেষ্ট হওয়ার আহবানও জানানো হয় ওই বিবৃতিতে।