অনলাইনে মতপ্রকাশ ও ডিজিটাল জীবনমান সূচকে পিছিয়ে বাংলাদেশ


অনলাইনে মতপ্রকাশ ও ডিজিটাল জীবনমান সূচকে পিছিয়ে বাংলাদেশ

ছবি : বিজেসি নিউজ

 

দুটি কারণে বাংলাদেশে অনলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রেকর্ড হারে কমছে। প্রথমত, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় ধরপাকড় জারি রেখেছে সরকারি কর্তৃপক্ষ এবং দ্বিতীয়তটি, ক্রমেই অভিনব সব উপায়ে সরকারি নজরদারির খবর আসছে সামনে। মার্কিন অলাভজনক গবেষণা সংস্থা ফ্রিডম হাউসের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

তাদের ‘ফ্রিডম অন দ্য নেট ২০২১’ প্রতিবেদনে ইন্টারনেটে বাকস্বাধীনতার সূচকে বাংলাদেশকে দেয়া হয়েছে ৪০ পয়েন্ট। গত বছর এই পয়েন্ট ছিল ৪২। সর্বমোট ১০০ পয়েন্টে এই পয়েন্ট পায় বাংলাদেশ।

প্রাপ্ত পয়েন্টের ভিত্তিতে সব দেশগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করেছে সংগঠনটি। পয়েন্ট ১০০ থেকে ৭০-এর মধ্যে থাকলে ‘মুক্ত’, ৬৯ থেকে ৪০-এর মধ্যে থাকলে ‘আংশিক মুক্ত’ এবং ৩৯-এর নিচে হলে ‘মুক্ত নয়’। বাংলাদেশের অবস্থান আংশিকমুক্ত শ্রেণির তলানিতে।

২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বরাবরই আংশিকমুক্ত দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে বাংলাদেশ। বিশ্বের ৭০টি দেশের ওপর ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনটিতে পর্যালোচনা করা হয়েছে। এতে ইন্টারনেটে স্বাধীনতার স্তর নির্ণয়ে সেবা ব্যবহারে বাধা, কনটেন্টের সীমাবদ্ধতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন এই ৩ ধরণের মোট ২১টি প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।

এই প্রতিবেদনে ২০২০ সালের ১ জুন থেকে চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত ঘটনাবলী বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে— রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে থ্রি–জি ও ফোর–জি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়। প্রায় এক বছর পর ২০২০ সালের আগস্টে তা আবার চালু করা হয়।

এছাড়াও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মার্চে যখন বাংলাদেশ সফরে আসেন, তখন চলমান আন্দোলনে তিন দিনের জন্য ফেসবুক ও ফেসবুক মেসেঞ্জার বন্ধ করে দেয়া হয়।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চে আল–জাজিরা ও ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি নজরদারি সরঞ্জাম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নজরদারি, হ্যাকিং ও মুঠোফোন থেকে তথ্য সংগ্রহের প্রযুক্তি কিনেছে বাংলাদেশ।

এছাড়াও প্রতিবেদনে উঠে আসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যুর ঘটনা। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনটির বিরুদ্ধে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবাদ শুরু হয়। করোনা মোকাবিলায় সরকারের সমালোচনা করে দেয়া ফেসবুক পোস্টের জেরে গত বছরের মে মাসে আটক হোন মুশতাক।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে ২০২০ সালের প্রথম ৯ মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৮শ'র বেশি মামলা হয়েছে। এছাড়াও সরকারের সাইবার ট্রাইব্যুনালের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালের অক্টোবরে আইনটি প্রণয়ন হয়। এরপর থেকে প্রায় দুই হাজার মামলা দায়ের হয়েছে।

প্রতিবেদনে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের ছিলো নয়টি সূচক। এর মধ্যে সাতটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে বাধা, ওয়েবসাইট বন্ধ, ইন্টারনেট বন্ধ, সরকারপন্থী ভাষ্যকার, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আটক, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে শারীরিকভাবে হেনস্তা ও কারিগরি হামলা।

প্রতিবেদন সূচকে ৯৬ পয়েন্ট পেয়ে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে আইসল্যান্ড। আর চীনের অবস্থা সবচেয়ে করুণ। মাত্র ১০ পয়েন্ট পেয়েছে দেশটি। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পরে আছে শুধু পাকিস্তান। ২৫ পয়েন্ট পেয়েছে দেশটি। ‘মুক্ত নয়’ তকমা জুটেছে দেশটির। ভারত ও শ্রীলঙ্কার পয়েন্ট যথাক্রমে ৪৯ ও ৫১। প্রতিবেদনে সার্কভুক্ত অন্য দেশগুলো নেই।

এদিকে, ডিজিটাল জীবনমান সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে। ১১০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১০৩। আর এশিয়ার ৩২টি দেশের মধ্যে ৩০ তম অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পরে ১০৪ নম্বরে আছে তাজিকিস্তান এবং ১০৯ নম্বরে আছে কম্বোডিয়া।

 

ছবিতে 'ডিজিটাল কোয়ালিটি অব লাইফ ইনডেক্স ২০২১' জরিপে বাংলাদেশের অবস্থান

সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান সার্ফশার্কের সাম্প্রতিক 'ডিজিটাল কোয়ালিটি অব লাইফ ইনডেক্স ২০২১' জরিপ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণ এশিয়া থেকে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশের ডিজিটাল জীবনমানের ওপর জরিপ চালিয়েছে।

এশিয়ায় নেপালের অবস্থান ২৪ তম এবং বৈশ্বিক র‍্যাংকিংয়ে ৮৭তম অবস্থান। শ্রীলংকার অবস্থান এর ঠিক পরেই। তালিকা মতে, ৫৯তম অবস্থান নিয়ে বৈশ্বিক র‍্যাংকিংয়ে ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে রয়েছে। আর এশিয়ায় ৩২ দেশের মধ্যে ১৭ নম্বর অবস্থানে রয়েছে।

এই তালিকায় পাকিস্তান আছে এশিয়াতে ২৮ নম্বরে আর বৈশ্বিক অবস্থান ৯৭ নম্বরে।

তালিকায় সবার উপরে রয়েছে ডেনমার্ক। দক্ষিণ কোরিয়া রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। তৃতীয় অবস্থানে আছে ফিনল্যান্ড। আর চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। তালিকায় সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে ইরিত্রিয়া।

সার্ফশার্কের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে, ইন্টারনেট কেনার সামর্থ্য, ই-নিরাপত্তা, ডিজিটাল মান, ইন্টারনেটের মান, ই-অবকাঠামো ও ই-সরকারকে মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে এই জরিপ করা হয়েছে।