এবার ভূপৃষ্ঠ পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে যাচ্ছে বাংলাদেশ


এবার ভূপৃষ্ঠ পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে যাচ্ছে বাংলাদেশ

ছবি : সংগৃহীত

 

দ্বিতীয় কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু-১ এর পর দেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইটটি হবে একটি ‘আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট’, যা ভূপৃষ্ঠের ছবি তোলার মাধ্যমে দেশের ফসল উৎপাদনের চিত্র, বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণসহ বিশাল সমুদ্র অঞ্চল নজরদারিতে সহায়তা করবে।

স্যাটেলাইটটি বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চল এবং আশেপাশের দেশগুলোকে স্পষ্টভাবে পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত হতে পারে।

বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু -১ নামে পরিচিত প্রথম স্যাটেলাইটটির সাফল্যের পর মহাকাশে দ্বিতীয় স্যাটেলাইট পাঠানোর প্রকল্প শুরু করেছে বাংলাদেশ।

ছবি : সংগৃহীত

 

দ্বিতীয় স্যাটেলাইটটি পরিবেশ পর্যবেক্ষণ, আবহাওয়া এবং কার্টোগ্রাফি সহ পর্যবেক্ষণের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশ এবং আশেপাশের দেশগুলোর বিশাল সমুদ্র অঞ্চল ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে ব্যবহার করা হতে পারে।

সামরিক প্রেক্ষাপটে এই ধরণের স্যাটেলাইট আকাশে নজরদারির কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকলেও, প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের জন্য হুমকি হতে পারে প্রতিবেশী দেশগুলোর এমন সব বাঁধ, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নদীর ডাইভারসনের মতো দুর্বল পরিকল্পিত অবকাঠামো প্রকল্প থেকে মানুষের তৈরি পরিবেশগত বিপর্যয়ের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করতে ব্যবহার করা হতে পারে।

প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্স (পিডব্লিউসি) সম্পূর্ণ সম্ভাব্যতা পর্যবেক্ষণের পরে উপগ্রহের ধরণ সুপারিশ করেছে।

দেশের কাজের পাশাপাশি এ স্যাটেলাইট দিয়ে আয় করার সুযোগও থাকছে। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা অঞ্চল এ স্যাটেলাইটের আওতায় থাকবে বলে সেসব এলাকার নানা তথ্য উপাত্ত বিক্রি করে আয় করা যাবে। কারণ সব দেশের এই স্যাটেলাইট নেই।

দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ এর সিস্টেমের নকশা তৈরির মূল পরামর্শক ছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল’। এরপর এক হাজার ৯৫১ কোটি ৭৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকার চুক্তিতে স্যাটেলাইট সিস্টেম কেনা হয় ফ্রান্সের কোম্পানি তালিস এলিনিয়া স্পেস থেকে।

২০১৮ সালের ১২ মে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেইপ কেনাভেরালে কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড থেকে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট মহাকাশে যাত্রা করে।

এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ হয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী ৫৭তম দেশ।

ছবি : সংগৃহীত

 

উৎক্ষেপণের ছয় মাসের মাথায় ২০১৮ সালের নভেম্বরে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণও সম্পূর্ণভাবে বুঝে পায় বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণে যে খরচ হয়েছিল এবার তার চেয়ে কম হবে খরচ। কারণ বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর এর গ্রাউন্ড স্টেশনসহ সব ধরণের অবকাঠামো সুবিধা এখন রয়েছে। দ্বিতীয়টি উৎক্ষেপণের পর সেসব খরচ হবে না।

এছাড়া কোনো অরবিটাল স্লট ইজারা দেয়ার প্রয়োজন হবে না কারণ স্যাটেলাইটটি লো আর্থ অরবিট (LEO) স্যাটেলাইট যা অনেক কম অপারেশনাল উচ্চতা সহ।

বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন স্যাটেলাইট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম ফ্রান্সের অ্যারিয়ান স্পেস-এর সাথে যৌথভাবে কাজ করছে এবং বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে দ্বিতীয় স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠাবে। ফরাসি কোম্পানি তার উৎক্ষেপণ যানবাহনের বিভিন্ন সংস্করণ ব্যবহার করে ১৯৭৯ সাল থেকে ৮৫০টিরও বেশি উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করেছে।