সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলবে উদ্বেগ, নিন্দা, প্রতিবাদ


সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলবে উদ্বেগ, নিন্দা, প্রতিবাদ

ছবি : সংগৃহীত

 

জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১১ সাংবাদিক নেতার ব্যাংক হিসাব তলবের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সম্পাদক পরিষদ। অন্যদিকে, তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রেসক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)।

১৬ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করে সম্পাদক পরিষদ।

বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সাংবাদিকদের শীর্ষ চার সংগঠনের ১১ নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে।

সম্পাদক পরিষদ মনে করে প্রচলিত আইনে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত হতে পারে। কিন্তু, শুধু একটি পেশার ১১ শীর্ষ নেতার ঢালাওভাবে ব্যাংক হিসাব তলব উদ্দেশ্যমূলক। যা অতীতে কখনো কোনো পেশার ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেনি। সম্পাদক পরিষদ এ ঘটনাকে স্বাধীন সাংবাদিকতা পেশার ওপর চাপ ও হুমকি বলে মনে করে।

সম্পাদক পরিষদের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি মাহফুজ আনাম ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।

অন্যদিকে, সাংবাদিকদের শীর্ষ চার সংগঠনের ১১ নেতার ব্যাংক হিসাব তলবের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রেসক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)।

১৫ সেপ্টেম্বর, বুধবার আলাদা সংবাদ বিবৃতিতে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় তারা।

প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায় বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, প্রচলিত আইনে কোনো ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত হতেই পারে। কিন্তু শুধু একটি পেশার সকল সংগঠনের নির্বাচিত শীর্ষ নেতাদের নামে ঢালাও এই সিদ্ধান্ত বিশেষ উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘ঢালাওভাবে ব্যাংক হিসাব তলবে সাংবাদিক সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। এমনকি নজীরবিহীনভাবে জাতীয় প্রেসক্লাবের মতো একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। যা কখনও কোনকালে ঘটেনি। নির্বাচিত সাংবাদিক নেতাদের জনসমক্ষে হেয় ও সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন করা হয়েছে।’

সাংবাদিক সমাজকে হেয় প্রতিপন্নকারী এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে জাতীয় প্রেসক্লাব।

অন্য এক বিবৃতিতে ডিআরইউ কার্যনির্বাহী কমিটি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলে, কোনো ব্যক্তি বিশেষের ব্যক্তিগত দুর্নীতি বা অপরাধের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের তদন্ত হতে পারে। কিন্তু সাংবাদিকতা পেশার সব সংগঠনের নির্বাচিত শীর্ষ নেতাদের নামে ঢালাও এ সিদ্ধান্ত উদ্দেশ্যমূলক। এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের সব সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি অশ্রদ্ধা ও অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হয়েছে।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়, সাংবাদিকতা পেশাকে জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে।  বিষয়টি কিছুটা যুক্তিসংগত হতো যদি অন্যান্য পেশাজীবী সব সংগঠনের সব নির্বাচিত নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করা হতো। কিন্তু তা না করে শুধু সাংবাদিক নেতাদের নামে এ সিদ্ধান্ত সুস্থ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হুমকির শামিল।

ডিআরইউ মনে করে, কোনো বিশেষ মহলের পরিকল্পনায় বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা, এর পেছনে কোন অসৎ উদ্দেশ্য আছে কিনা, সে বিষয়ে তদন্ত ও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। দুর্নীতিবাজ আমলাচক্র এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে ডিআরইউ কার্যনির্বাহী কমিটি সন্দেহ পোষণ করছে।

এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার এক যুক্ত বিবৃতিতে, ব্যাংক হিসেব তলবের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন -বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে নির্বাহী পরিষদ।

গত ১২ সেপ্টেম্বর, রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১১ জন সাংবাদিক নেতার ব্যাংক হিসেব তলব করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউ। সেদিন দেশের সব ব্যাংকে এই তথ্য চেয়ে চিঠি দেয়া হয়।

ব্যাংক হিসেব তলব করা সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে রয়েছেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি মোল্লা জালাল ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আব্দুল মজিদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি এম আব্দুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি আব্দুল কাদের গণি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোরসালীন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান খান।

চিঠিতে বলা হয়, উল্লেখিত ব্যক্তিরা ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে কোনও হিসেব অতীতে অথবা বর্তমানে পরিচালিত হয়ে থাকলে সেসব হিসেবের যাবতীয় তথ্য (যাবতীয় কাগজপত্রাদিসহ হিসাব খোলার ফর্ম, কেওয়াইসি, ট্রানজেকশান প্রোফাইল, শুরু থেকে হালনাগাদ লেনদেন বিবরণী) জরুরি ভিত্তিতে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিবরণীর শুধু সফটকপি পাঠাতে হবে। একইসঙ্গে এই সাংবাদিক নেতাদের নামে কোনও হিসেব অতীতে অথবা বর্তমানে পরিচালিত হয়ে থাকলে, তাও জানাতে বলা হয়েছে।