অজানা আতঙ্কে আফগান গণমাধ্যম


অজানা আতঙ্কে আফগান গণমাধ্যম

ছবি : সংগৃহীত

 

নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন আফগানিস্তানে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন সেদেশের নাগরিকরা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সরিয়ে নিচ্ছে তাদের কর্মীদের। তালেবানের নিশ্চয়তা সত্ত্বেও তারা নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না। অনেকের মতে তাঁদের জীবন হুমকিতে।

সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে তালেবান যখন দেশটির বিভিন্ন অঞ্চল দখল করতে করতে কাবুলের দিয়ে এগিয়ে আসছিল, তখন বেশকিছু টেলিভিশন ও রেডিও স্টেশন তাদের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। তালেবানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের আশ্বাসের পরও তালেবান সদস্যরা বিরোধীদের ধরতে তালিকা তৈরি করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। তালিকায় আছেন সাংবাদিকরাও।

দুই দশক আগে ক্ষমতা দখলের পর তালেবানরা। ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান শাসনের সময় মুখ থুবড়ে পড়েছিল আফগানিস্তানের গণমাধ্যমগুলো। তখন ভয়েস অব শরিয়া নামে একটি মাত্র রেডিও স্টেশন ছিল। সেখানে শুধু ইসলামিক অনুষ্ঠান প্রচার করা হতো।

সেসময় টেলিভিশন, চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য বিনোদনের মাধ্যমকে ইসলামি মতাদর্শের বিরোধী বলে গণ্য করা হতো।

এমনকি কেউ টেলিভিশন দেখলে তাকে শাস্তি দেয়া হতো এবং টিভি ভেঙে গুঁড়ো করে দেয়া হতো। ভিডিও প্লেয়ারের মালিককে গণপিটুনি দেয়ার মত ঘটনাও ঘটত।

২০০১ সালে মার্কিনি বাহিনীর হস্তক্ষেপে তালেবান শাসনের অবসান ঘটলে গণমাধ্যম খাতে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে। পরবর্তীতে সেখানে বিভিন্ন রেডিও স্টেশন, টেলিভিশন স্টেশন স্থাপিত হয়।

পাশাপাশি বিনোদন ক্ষেত্রের পরিসর আরও বড় হয়। নিউজ চ্যানেলের পাশাপাশি চলচ্চিত্র, নাটক, মিউজিক ভিডিওসহ বিনোদন খাতের নানা শাখা সৃষ্টি হয়।

ছবি : সংগৃহীত

তালেবান শাসনের সময় নারীরা যেখানে ঘরে বন্দী থাকত, কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার অনুমতি ছিল না সেখানে নারীদের কর্মক্ষেত্র তৈরি হয়। নারীরা গণমাধ্যমে কাজ করতে শুরু করে।

ন্যাশনাল প্রেস ফেডারেশনের বরাত দিয়ে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) জানায়, বর্তমানে আফগানিস্তানে ৫০টির বেশি টেলিভিশন চ্যানেল, ১৬৫টি রেডিও স্টেশন ও কয়েক ডজন প্রকাশনা সংস্থা রয়েছে।

এছাড়াও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় সেখানের স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বেড়েছে।

ছবি : সংগৃহীত

সম্প্রতি আফগানিস্তান দখল করেছে তালেবান। ফলে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নারীরা কতোটুকু স্বাধীনতা পাবেন, কর্মক্ষেত্রে যেতে পারবেন কী না, সাংবাদিকরা নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারবেন কী না। এরইমধ্যে কর্মজীবী নারীদের ঘর থেকে বের না হবার নির্দেশ জারি করেছে তালেবান। নিরাপত্তার জন্য পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত এ নির্দেশনা জারি থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

কাবুল দখলের পর তালেবানের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীটির মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এক প্রশ্নের জবাবে আশ্বাস দিয়ে বলেন, গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে চলতে পারবে এবং সাংবাদিকেরাও কোনো ধরণের হামলা, হয়রানি নির্যাতনের মুখে পড়বেন না। নারীদের স্বাধীনতা ও কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার প্রসঙ্গে তালেবানরা জানায় নারীরা শরীয়া আইন মেনে কর্মক্ষত্রে যেতে পারবেন।

ছবি : সংগৃহীত

এছাড়া, তালেবান শাসনের দ্বিতীয় দিন তোলোনিউজ টেলিভিশনের এক লাইভ অনুষ্ঠানে একজন নারী সঞ্চালককে তালেবানের গণমাধ্যম শাখার এক সদস্যের সাক্ষাৎকার নিতেও দেখা যায়।

ছবি : সংগৃহীত

এতোকিছুর পরও সাংবাদিকরা নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না। কিছুদিন আগে কাবুলে জার্মান সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলের (ডিডাব্লিউ) এক সাংবাদিককে খুঁজে না পেয়ে তার পরিবারের এক সদস্যকে হত্যা করে তালেবানরা। এসময় তাদের হামলায় গুরুতর আহত হন আরো এক সদস্য।

এদিকে, স্থানীয় তালেবান দপ্তর থেকে রেডিও স্টেশনের অনুষ্ঠানগুলো পর্যালোচনা শেষে সম্প্রচারের অনুমতি মিলবে বলে জানিয়েছে, উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ জাওজানের স্থানীয় রেডিও স্টেশন সালাম ওয়াতানদার।

ছবি : সংগৃহীত

আফগানিস্তানের অনেক সাংবাদিক এখন আত্মগোপনে আছেন। অনেকে দেশ ছাড়তে উদ্ধারকারী ফ্লাইট পাওয়ার চেষ্টা করছেন। যারা বিদেশি গণমাধ্যমের জন্য কাজ করতেন, তাদের বেশিরভাগই দেশ ছেড়েছেন। কিন্তু যারা বিদেশি পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছেন না, তাদের জন্য দেশ ছেড়ে যাওয়া বেশ ঝক্কির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সবকিছু মিলিয়ে তালেবান শাসনে অজানা এক আতঙ্কে আছে আফগান গণমাধ্যম।