৪৮' এ পা রাখলেন ক্রিকেট কিংবদন্তি শচীন


৪৮' এ পা রাখলেন ক্রিকেট কিংবদন্তি শচীন

ক্রিকেট ইতিহাসের এক পূজনীয় খেলোয়াড়ের নাম শচীন টেন্ডুলকার। যিনি নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন অনন্য এক উচ্চতায়। যে উচ্চতায় আধুনিক যুগের ক্রিকেটে আর কোনো খেলোয়াড় এখনও উঠতে পারেননি। সেই কিংবদন্তির ৪৮তম জন্মদিন আজ। ১৯৭৩ সালের ২৪ এপ্রিল ভারতের মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন এই মহাতারকা।

২০১২ সালে ওয়ানডে ও ২০১৩ সালে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানান শচীন। বিদায়ের আগে তিনি গড়ে গেছেন অসংখ্য অনন্য ও বিরল রেকর্ড।

ছেলেবেলা থেকেই শচীনের ধ্যান-জ্ঞান ছিল ক্রিকেট। ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার মানুষটি এমন সব কীর্তি রেখে গেছেন যে, তার উচ্চতায় ভবিষ্যতেও কেউ পৌঁছাতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে।

ক্রিকেটকে কল্পনাই করা যায় না শচীনকে ছাড়া। তার ভক্ত ও অনুসারীরা তাকে ভালোবেসে ডাকেন ‘ক্রিকেট ঈশ্বর’। এছাড়া, ‘লিটল মাস্টার’, ‘মাস্টার ব্লাস্টার’ নামেও আখ্যায়িত করা হয় তাকে।

ব্যাট হাতে সেই স্কুল জীবনেই নজর কেড়েছিলেন শচীন। ভীষণ প্রতিভাবান হওয়ায় জাতীয় দলের দরজা খুলে যেতে তাই সময় লাগেনি। ১৯৮৯ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন তিনি। এর পরের গল্পটা তো সবারই জানা।

অবসর নেওয়ার আগে শচীন টেস্ট খেলেন রেকর্ড ২০০টি। ৫৩.৭৮ গড়ে রান করেন ১৫ হাজার ৯২১। ৫১টি সেঞ্চুরি ও ৬৮টি হাফসেঞ্চুরিতে ঝলমলে তার টেস্ট ক্যারিয়ার। ২০০৪ সালে সর্বোচ্চ ২৪৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে। দলের প্রয়োজনে কখনও বা বোলার হিসেবে দেখা গেছে তাকে। অফ স্পিনে নেন ৪৬টি উইকেট।

শচীনের ওয়ানডে ক্যারিয়ারও সাফল্যে পরিপূর্ণ। ওয়ানডে খেলেন ৪৬৩টি। যা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড। ৪৯টি সেঞ্চুরি ও ৯৬টি হাফসেঞ্চুরির সাহায্যে ৪৪.৮৩ গড়ে তার রান ১৮ হাজার ৪২৬। ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি এসেছিল তার ব্যাট থেকেই। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেছিলেন অপরাজিত ২০০ রানের অবিস্মরণীয় ইনিংস।

ওয়ানডেতে বল হাতেও কার্যকর ছিলেন শচীন। ক্যারিয়ারে তার উইকেটের সংখ্যা ১৫৬টি। পাঁচ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্বও দেখান দুবার। অর্জনে মোড়ানো বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি তিনি খেলেছিলেন ২০০৬ সালে। টেস্ট ও ওয়ানডে উভয় সংস্করণে সর্বোচ্চ রান ও সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ড নিয়ে বাকি ক্রিকেট তারকাদের চেয়ে অনেক উপরে তার অবস্থান।

প্রায় ২৪ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে শচীন মোট ৬টি বিশ্বকাপে খেলেন। প্রথম পাঁচটি বিশ্বকাপে তিনি নজর কাড়লেও শিরোপা জিততে পারেনি ভারত। সম্ভাব্য বাকি সব অর্জন করায় বিশ্বকাপ জয়ের প্রবল আকাঙ্ক্ষা ছিল তার। সব ক্রিকেটারেরই তা থাকে। ২০১১ সালে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ জয়ের মধ্য দিয়ে তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়। আসে ক্যারিয়ারে পূর্ণতা। শচীনের অনন্য একটি রেকর্ড হলো- আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ‘একশ’ সেঞ্চুরি। এশিয়া কাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১১৪ রানের ইনিংসে ২০১২ সালে ‘সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি’ করেন তিনি। ক্রিকেট ইতিহাসে এই রেকর্ড কখনো ভাঙবে কিনা সন্দেহ! ২০১২ সালে শচীন টেন্ডুলকার রাজ্যসভার সদস্য মনোনীত হন। প্রাপ্তি, অর্জনে আর সাফল্যে ভরা শচীন টেন্ডুলকারের ক্যারিয়ার।

২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর তিনি ঘোষণা করেন যে, ২০০তম টেস্ট খেলে ক্রিকেট থেকে অবসর নেবেন। শেষ ম্যাচ খেলার পরপরই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে ভারত রত্ন পাওয়ার ঘোষণা শুনেছিলেন।

এছাড়াও, তিনি পেয়েছেন ভারতের ক্রীড়াঙ্গনে অবদানের সর্বোচ্চ পুরস্কার রাজীব গান্ধী খেলরত্ন অ্যাওয়ার্ড (১৯৯৭), পদ্মশ্রী (১৯৯৯) ও পদ্মবিভূষণ অ্যাওয়ার্ড (২০০৮)।শচীনই প্রথম ভারতীয় খেলোয়াড়, যাকে ভারতীয় বিমানবাহিনী মর্যাদাসূচক ক্যাপ্টেন পদ প্রদান করে।