‘সাইবার বুলিং’ ও বাংলাদেশি কিশোর


‘সাইবার বুলিং’ ও বাংলাদেশি কিশোর

‘সাইবার বুলিং’ থেকে শিশুদের রক্ষায় কাজ করে এ বছর ‘আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার’ পেয়েছেন বাংলাদেশের কিশোর সাদাত রহমান। 

নেদারল্যান্ডসের হেগে গেলো নভেম্বরে এক অনলাইন অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে সাদাতের হাতে পুরস্কার তুলে দেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই।

১৭ বছর বয়সী নড়াইলের সাদাত রহমান একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছেন, যার মাধ্যমে সাইবার বুলিং বা অনলাইনে হুমকি ও হয়রানিমূলক আচরণ সম্পর্কে তরুণদের শেখানো হয়। সাইবার বুলিং-এর শিকার হয়ে বাংলাদেশে ১৫ বছরের এক কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনা জানতে পেরে এই অ্যাপ বানাতে অনুপ্রাণিত হন তিনি।

অনুষ্ঠানে, সাদাত রহমানকে তরুণদের জন্য 'অনুপ্রেরণা' হিসেবে আখ্যা দেন মালালা ইউসুফজাই।

মালালা বলেন, "সাদাত একজন সত্যিকারের চেইঞ্জমেকার। তিনি সারা বিশ্বের তরুণ-তরুণীদের সাইবার বুলিং বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন এবং আশেপাশের যেসব মানুষ মানসিক নির্যাতন ও আবেগের সমস্যায় ভুগছেন তাদের সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন,”।

সাইবার বুলিং কী! অনলাইনে কোন শিশুকে প্রলুব্ধ বা হেয় প্রতিপন্ন করা, ভয় দেখানো এবং মানসিক নির্যাতন করাকে সাইবার বুলিং বলা হয়। শুরুতে কিশোর-কিশোরীরাই কেবল এ ধরনের কাজে জড়িত থাকে ভেবে বুলিং সংজ্ঞায়িত করা হলেও পরে দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে স্বনামে বা ফেক আইডির আড়ালে প্রাপ্তবয়স্ক অনেকেও এ ধরনের হীন কাজে জড়িত। সাইবার বুলিংয়ের ঘটনা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ঘটলেও ফোনে কিংবা ইমেইলেও অনেক সময় এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটে থাকে।

সাদাত রহমানের অ্যাপ্লিকেশন সাইবার টিনসের মাধ্যমে, তরুণরা তাদের গোপনীয়তা রক্ষা করে স্বেচ্ছাসেবী একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গোপনে সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ দায়ের করতে পারে। ওই স্বেচ্ছাসেবীরা পরে পুলিশ বা সমাজকর্মীদের কাছে যান এবং অনলাইনে সুরক্ষা সম্পর্কে কিশোর-কিশোরীদের শিক্ষিত করে তোলেন।

এই অ্যাপটি চালু হওয়ার পর অনলাইনে হয়রানির শিকার তিন শতাধিক তরুণ সহায়তা পেয়েছে এবং অনলাইনে শিশুদের উপর যৌন হয়রানির দায়ে প্রাপ্তবয়স্ক আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

সাদাত রহমানের জেলার প্রায় ১,৮০০ কিশোর এখন অ্যাপটি ব্যবহার করছে বলে জানা যায়। সংবাদ সংস্থা এএফপি এর তথ্য অনুসারে, এই কিশোর পুরস্কার হিসেবে পাওয়া এক লাখ ১৮ হাজার ডলার তার দেশে এই অ্যাপ্লিকেশনটি ছড়িয়ে দেয়ার কাজে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছেন।

সাইবার বুলিং বিশ্বের একটি বড় সমস্যা বলে মনে করেন সাদাত। পুরস্কার গ্রহণ করে তিনি জানান যে, বাংলাদেশের অর্ধেক তরুণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন। কিন্তু ভয় এবং জ্ঞানের অভাব থাকায় তাদের অনেকেই এসব ঘটনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জানাননি।

সাদাত বলেন, "আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সচেতনতা, সহানুভূতি, কাউন্সেলিং এবং যথাসময়ে পদক্ষেপ- এই চারটি বিষয় হল সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চালক শক্তি," তিনি বলেন। "সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে লড়াই অনেকটা যুদ্ধের মতো, এবং এই যুদ্ধে আমিও একজন যোদ্ধা। যদি সবাই আমাকে সমর্থন করে যায়, তবে একসাথে আমরা সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে জয়ী হব।"