সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয় হতে গিয়ে..


সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয় হতে গিয়ে..

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রিয় হতে গিয়ে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে এক ইরানী তরুনীকে। উনিশ বছরের ফতেমা খিশভান্দ তার বয়সী আর পাঁচটা তরুণীর মতই বিখ্যাত হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই চাওয়াই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ১০ বছরের জন্য কারাগারে পাঠানো হয় ফাতেমাকে।

ইনস্টাগ্রামে ফতেমার সেলফিগুলো আর পাঁচজনের মত ছিল না। নানা কায়দাকানুন ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি তার সেলফিতে মুখের চেহারা বদলে দিতেন। কখনও গাল তোবড়ানো, কখনও বিকৃত চেহারা আবার কখনও চড়া মেক আপ দিয়ে বদলে দিতেন নিজের চেহারা। ইনস্টাগ্রামে 'সাহার তাবার' এই ছদ্মনামে নিজের ছবিগুলো পোস্ট করতেন তিনি।

২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে প্রথম সাড়া ফেলে তার সেলফিগুলো। ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা ফাতেমার কোন কোন ছবিতে তার চেহারার সাথে হলিউড তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জলির এতই মিল ছিল যে গুজব রটে, হলিউড অভিনেত্রীর মত চেহারা করাতে ফাতেমা ৫০ বার অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। এরপরেই তার অনুসারীর সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকে এবং এটি গিয়ে দাঁড়ায় পাঁচ লাখে।

জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি জোটে ঠিকই, কিন্তু চড়া মূল্য দিতে হয় ফাতেমাকে। ইরান কর্তৃপক্ষ ফাতেমার পোস্টগুলোকে একটা অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করে। ২০১৯ এর অক্টোবরে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া, সহিংসতায় ইন্ধন জোগানো, ধর্মীয় পোশাক পরিচ্ছদের অবমাননা এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দুর্নীতি উস্কে দেয়ার অভিযোগ এনে গ্রেফতার করা হয় ফাতেমাকে। এছাড়া, তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয় এবং এক বছরের বেশি সময় তাকে কারাগারে কাটাতে হয়। এরপর ইসলামিক রেভল্যুশনারি আদালত ফতেমাকে গত ডিসেম্বরে দশ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।

ফাতেমাকে দেয়া শাস্তির কঠোরতা বহু মানুষকে বিস্মিত করে এবং এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। তারা ফাতেমার সাজাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের প্রতি ইরানী কর্তৃপক্ষের কঠোর মনোভাবের নতুন একটা দৃষ্টান্ত বলে মনে করেন।

টু্‌ইটারে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় ইরানের বিশিষ্ট সাংবাদিক মাশি আলিনেজাদ লিখেছেন, "ইসলামী এই প্রজাতন্ত্রে নারীদের নাচগান বা বাধ্যতামূলক হিজাব খোলা, স্টেডিয়ামে যাওয়া, মডেলিং করা এসব কারণে গ্রেফতার হওয়ার ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু ফটোশপ ব্যবহার করে ছবিতে চেহারা পরিবর্তনের জন্য সাজা?"

ইরানের মানবাধিকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্দোলনকারী একটি দলের গবেষণা অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ইন্টারনেট কর্মকাণ্ডের জন্য দেশটিতে অন্তত ৩৩২জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১০৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, ইনস্টাগ্রামে তাদের পোস্টের কারণে।

খবর সূত্র: বিবিসি