অ্যাসাঞ্জকে অ্যামেরিকায় পাঠাতে না করে দিলো বৃটেন


অ্যাসাঞ্জকে অ্যামেরিকায় পাঠাতে না করে দিলো বৃটেন

উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে বিচারের জন্য মার্কিন সরকারের হাতে তুলে না দেয়ার পক্ষে রায় দিয়েছে বৃটিশ আদালত।

সোমবার আদালতে বিচারক ভেনেসা ব্যারাইটজার অ্যাসাঞ্জের মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে বলেন, তাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিলে কাজটি হবে ‘নিপীড়নমূলক'৷ তিনি বলেন, মার্কিন দেশে ফেরত পাঠালে অ্যাসাঞ্জ হয়তো আত্মহত্যা করবেন।

ব্রিটিশ জুডিশিয়াল অফিস পুরো রায়টি টুইট করেছে।

২০১০ সালে উইকিলিকসের নামে অ্যামেরিকান মিলিটারির প্রায় পাঁচ লাখ নথি ফাঁস করে দেন অ্যাসাঞ্জ৷ এসব নথিতে আফগানিস্তান ও ইরাকে মিলিটারির কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে৷ এরপরই তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ১৮টি অভিযোগ আনা হয়, যার একটি গুপ্তচরবৃত্তি। অভিযোগ প্রমাণ হলে তাকে ১৭৫ বছর জেল খাটতে হবে।

তবে আদালতে বিচারক ভেনেসা ব্যারাইটজার মানসিক অবস্থার কথা বললেও, বাক-স্বাধীনতার যুক্তি খারিজ করে দেন। তিনি বলেন, ‘‘অপরাধ প্রমাণিত হলে তা বাক-স্বাধীনতার যুক্তিতে সুরক্ষা পাবে না৷''

মার্কিন জেলে একাকী থাকার শঙ্কা আসাঞ্জকে হতাশাগ্রস্ত করে তুলছে মন্তব্য করে বিচারক ভেনেসা  বলেন, অ্যাসাঞ্জের সেই ‘বুদ্ধি ও দৃঢ়তা' আছে, যা ব্যবহার করে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন এবং কর্তৃপক্ষ তা ঠেকাতে পারবে না‘।

৪৯ বছর বয়সী জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ১৯৭১ সালে উত্তর-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার টাউনসভিলে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৬ সালে তিনি উইকিলিকস নামের একটি ওয়েব প্লাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেন। যে কেউ চাইলে গোপন নথি সেখানে প্রকাশের জন্য দিতে পারতো।

২০১০ সালে উইকিলিকস আলোচনায় আসে। তারা তখন ২০০৭ সালের একটি গোপন ভিডিও প্রচার করে, যেখানে দেখানো হয়, বাগদাদে অ্যাপাচি হেলিকপ্টার ব্যবহার করে মার্কিন মিলিটারি ডজনখানেক মানুষকে মেরে ফেলে, যার মধ্যে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুই সংবাদকর্মী ছিলেন।

এরপর উইকিলিকস মার্কিন কূটনীতির লাখ লাখ গোপন নথি প্রকাশ করতে শুরু করে। সেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন থেকে শুরু করে সৌদি রাজপরিবারের সদস্যদের বিষয়ে নানান সমালোচনামূলক বার্তা, আফগান যুদ্ধের মার্কিন অপারেশনের নানা তথ্য ছিল।

পরবর্তীতে জুলিয়ানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে গুপ্তচরবৃত্তিসহ ১৮টি অভিযোগ আনা হয়৷। এমন কি যৌন নিপীড়নের অভিযোগও আনা হয় তার বিরুদ্ধে। 

২০১২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি লন্ডনে ইকুয়েডরের এম্বেসিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পান। ২০১৯ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

এদিকে, অ্যাসাঞ্জকে গ্রেফতার ও তাকে বিচারের মুখোমুখি করা সংবাদমাধ্যম ও বাক-স্বাধীনতার ওপর আঘাত বলে মনে করেছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। সোমবার ব্রিটিশ আদালত যেন তাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে না দেয় সেজন্য বিভিন্ন পর্যায় থেকে আহ্বান জানানো হচ্ছিল। 

জাতিসংঘের বিশেষ দূত নিলস মেলজার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে অপরাধমূলক কাজ হিসেবে দেখাতে চাইছে'। 

তিনি বলেন, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে মার্কিন আদালত গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। অথচ তিনি ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম অর্থাৎ, মুক্ত সাংবাদিকতা করেছেন। উনি সরকারের গোপন নথি জনসমক্ষে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু তিনি সরকারি চাকরি করতেন না। ফলে এ কাজে তাঁর কোনো বাধা ছিল না। তথ্যগুলি তিনি চুরিও করেননি। তাঁর কাছে তথ্যগুলি কেউ পৌঁছে দিয়েছিল। তিনি কেবল তা সামনে এনেছেন। এবং প্রতিটি বিষয়ই জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ফলে কোনো অন্যায় করেননি জুলিয়ান।

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তরের জন্য শুরু থেকেই যুক্তরাজ্যকে চাপ দিয়ে আসছিল ওয়াশিংটন। তবে লন্ডন আদালতের রায়ে সে চেষ্টা আটকে গেল। যদিও এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।