ডিসির করা মামলায় সাংবাদিক কারাগারে


ডিসির করা মামলায় সাংবাদিক কারাগারে

আকিব হৃদয়

জেলা প্রশাসকের করা মামলায় কারাগারে গেছেন কিশোরগঞ্জের এক সাংবাদিক। গেলো সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে শহরের সার্কিট হাউজ এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে মোটরবাইকসহ আটক করে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে।

আকিব হৃদয় দৈনিক প্রতিদিনের কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি। এছাড়া তিনি ‘আনন্দ টিভি’ এবং ‘দেশ টাইম’ নামে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালেও কাজ করেন।

জরিমানা করার পর, ওইদিন বিকেলে ফেসবুক লাইভে এসে আকিব অভিযোগ করেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেটকে ‘স্যার' না বলে ‘ভাই' বলায় তাকে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সাংবাদিক পরিচয় দেয়াতে তারা ক্ষুব্ধ হন বলেও লাইভে উল্লেখ করেন তিনি।

এরপর সেই রাতেই ডিসি সারোয়ার মুর্শেদ চৌধুরী নিজে বাদি হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আকিবের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। রাতেই তাকে উকিল পাড়ার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার আদালতে হাজির করলে তাকে কারাগারে পাঠান বিচারক।

জেলা প্রশাসকের অভিযোগ, ‘‘তার (আকিব) কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স ও হেলমেট ছিলো না। এমনকি সে মাস্কও পরেনি। ফলে আইন অনুযায়ীই তাকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু এরপর সে ডিসি অফিসের সামনে গিয়ে ফেসবুক লাইভে বলে, ম্যাজিস্ট্রেটকে স্যার না বলায় তাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সে আরো অনেক অবমাননাকর কথা বলেছে। তার অভিযোগ মিথ্যা। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি”।

জেলা প্রশাসক জানান, ”সে লাইভে আরো বলে, ‘‘ডিসিকে আমরা ভাই বলব না তাহলে কী বলব? বাবা বলব, ডিসি আব্বা বলব’’?

জেলা প্রশাসকের মতে, সে যেহেতু ফেসবুকে জেলা প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে তাই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আমি সাংবাদিকদের সাথে বৈঠক করেছি। তারাও আমার সাথে একমত হয়েছেন।’’

এই মামলায় আরো দুইজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন, মোস্তাফিজুর রহমান ও সারোয়ার হোসেন রনি। তারাও আকিবের সঙ্গে ফেসবুক লাইভে ছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়।

ফেসবুক লাইভে আকিব দাবি করেন, তার হেলমেট ও মাস্ক ছিলো। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। আর তাকে প্রথমে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ২ মাসের কারাদণ্ডের কথা বলা হয়। পরে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সে আরো অভিযোগ করে যে, তাকে বার বার বলা হচ্ছিল, ‘‘সাংবাদিকদের আমরা বেশি জরিমানা করি।’’

এই ঘটনার পর আকিবের বাবা বাচ্চু খান বলেন, ‘‘তাদের স্যার না বলায় তাকে সর্বোচ্চ জরিমানা করা হয়েছে৷ প্রতিহিংসা আর ক্ষমতা দেখাতেই ডিজিটাল আইনে মামলা করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে৷ নয়তো একজন ডিসি  সরাসরি মামলা করবেন কেন?’’  

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমার ছেলে ডিসি অফিসের সবাইকে চিনত৷ সে কারণেই হয়তো মটর সাইকেল থামানোর পর ভাই বলেছে৷’’

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আহমেদ উল্লাহ বলেন, ‘‘এখানে দুই পক্ষই বাড়াবাড়ি করেছে৷ আমার মনে হয় ডিজিটাল আইনে মামলা করে তাকে কারাগারে না পাঠিয়েও বিষয়টির সমাধান করা যেত৷ আমাদের সাথে এ নিয়ে প্রশাসনের বৈঠক হয়েছে৷’’