গণমাধ্যমের ভবিষ্যত খুব খারাপ : বিজেসি নিউজকে আফগান সাংবাদিক


গণমাধ্যমের ভবিষ্যত খুব খারাপ : বিজেসি নিউজকে আফগান সাংবাদিক

ছবি : সংগৃহীত

 

সিউল আহমেদ, বিজেসি নিউজ: ‘আফগানিস্তানের অবস্থা আপনারা সবাই জানেন, সাংবাদিক হিসাবে এখানে কাজ করার সীমাবদ্ধতা আছে। বর্তমানে আমাদের একটা সীমাবদ্ধতার মাঝে কাজ করতে হচ্ছে। এই সীমার বাহিরে গিয়ে আপনি চাইলেও কিছু করতে পারবেন না’।

কথাগুলো বলছিলেন, আফগানিস্তানের ব্রডকাস্ট মিডিয়াতে কাজ করা একজন সাংবাদিক। এই সাংবাদিকের সাথে কথা বলেছে বিজেসি নিউজ। বর্তমানে আফগানিস্তানের গণমাধ্যমের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে কথা বলেন তিনি। তবে তালেবানের ভয়ে নাম প্রকাশ ও নিজের পরিচয় গোপন রাখার অনুরোধ করেন সেখানে কাজ করা অনেক সাংবাদিক।

 

ছবি: বিজেসি নিউজকে সাক্ষাৎকার দেয়া আফগান সাংবাদিক 

প্রায় দুই দশক পর ১৫ আগস্ট তালেবান, কাবুল দখল করে। এরপরেই আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন আফগানিস্তানের সাধারণ নাগরিকরা। তালেবান শাসনের ভয়ঙ্কর পরিণতি আঁচ করতে পেরে হাজার হাজার মানুষ নিজেদের শেষ সম্বলটুকু নিয়ে আপ্রাণভাবে চাইছেন দেশ ছাড়তে।

সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে পড়েছেন দেশটিতে কাজ করা শত শত সাংবাদিক। এদের মধ্যে কিছু বিদেশী সাংবাদিক আছেন তবে বেশিরভাগই আফগান, যাদের অনেকেই গত ২০ বছর ধরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাথে কাজ করেছেন।

 

ছবি : সংগৃহীত

এরই মাঝে সাংবাদিকদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন আফগানিস্তানের সাংবাদিকদের নিরাপদে বের করে আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তবে কেউ কেউ বিভিন দেশে আশ্রয় নিলেও অধিকাংশ আফগান সাংবাদিক এখনো আফগানিস্তানে রয়ে গেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

বিজেসি নিউজের সাথে কথা বলা সেই সাংবাদিক আরো জানান, বর্তমানে তালেবান সরকার আসার পর থেকে গণমাধ্যমে কথা বলার স্বাধীনতা কমে গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আফগান সাংবাদিক বলেন, ‘বর্তমান সরকার আসার আগে আমাদের মিডিয়াতে কথা বলার স্বাধীনতা ছিল, আমাদের কথা বলার জায়গা ছিল, তবে বর্তমান সরকারের সময় আমাদের এসব কোনো অধিকারই নেই’।

তালেবান, কাবুল দখল করার পর এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যেই আফগানিস্তানের বেশ কিছু গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে যায়। মুক্ত গণমাধ্যম নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর বরাত দিয়ে আফগান সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজ জানায়, ২০টি প্রদেশে ১৫৩টি গণমাধ্যম বন্ধ হয়েছে।

 

ছবি : সংগৃহীত

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বন্ধ হয়ে যাওয়া গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে আছে রেডিও, প্রিন্ট ও টিভি চ্যানেল। এগুলো বন্ধের মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে অর্থনৈতিক সমস্যা ও নিষেধাজ্ঞার কথা। এদিকে, মুক্ত গণমাধ্যম নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আর্থিক অবস্থা এবং নিষেধাজ্ঞা তুলে না নিলে আরো কিছু গণমাধ্যম বন্ধ হওয়ার আশংকা রয়েছে।

নতুন সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর বলা হয়েছিল এসব শঙ্কা থেকে মুক্তি পাবে আফগানিস্তান গণমাধ্যম। তবে নতুন তালেবান সরকার থেকে আফগানিস্তানের জনগণ কোনো সুফল পাবে না বলেও ধারণা করছেন এই আফগান সাংবাদিক।

বিজেসি নিউজকে তিনি বলেন, ‘তালেবান নতুন করে তাদের সরকার ঘোষণা করেছে। তবে সেটি খুবই ছোট করে। তারা সরকার গঠনের আগে বলেছিল অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশেষ সরকার গঠন করবে, তবে তারা সেটি করতে পারেনি, আফগানিস্তানের সাধারণ জনগণ তা জানে’।

 

ছবি : সংগৃহীত

আফগানিস্তান থেকে নিরাপদ স্থানে যেতে ইচ্ছুক কয়েকশ সাংবাদিকের নিবন্ধন ও তাদের আবেদনের সত্যায়ন করেছে সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট-সিপিজে। উচ্চপর্যায়ের ঝুঁকিতে আছেন ৪৫ জন, উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঝুঁকিতে আছেন ১২৭ জন আফগান গণমাধ্যম সদস্য।

 

ছবি : সংগৃহীত

ভবিষ্যতে আফগানিস্তানের গণমাধ্যম আরও খারাপের দিকে যাবে বলেও ধারণা করছেন আফগান সাংবাদিক।

‘আফগানিস্তানে সাংবাদিকতার ভবিষ্যত খুব একটা ভালো হবে না বলেই আমি মনে করি, আপনি লিমিটের মধ্যে থেকে গণমাধ্যমে কাজ করতে পারবেন না। দিন দিন এই অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাবে বলেই আমার মনে হয়। এই অবস্থা ভালো হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই’-বিজেসি নিউজকে বলেন ওই আফগান সাংবাদিক।

যদিও তালেবান সরকার বলছে, মিডিয়া ও সাংবাদিকদের কাজের জন্য তারা নিরাপদ পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করবে।