জার্মানির রেডিওর শতবর্ষের ইতিহাস


জার্মানির রেডিওর শতবর্ষের ইতিহাস

একশ বছর আগে জার্মানিতে রেডিও যুগের সূচনা হয়েছিল। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছিল এই মাধ্যম। নাৎসিদের প্রচারণার অন্যতম মাধ্যমও হয়ে উঠেছিল রেডিও।

১৯২০ সালের ২২ ডিসেম্বর জার্মানিতে প্রথম রেডিওর অনুষ্ঠান শুরু হয়। রেডিও ওয়েভ ২৭০০ তে প্রচারিত হয়েছিল ক্রিসমাস কনসার্ট। যেটি ছিলো প্রথম রেডিও অনুষ্ঠান। ক্যোয়ানিগস শহরে জার্মান পোস্টাল সার্ভিসের রাইখসাপোস্ট রেডিওর পথচলা এভাবেই শুরু হয়।

ভার্সাই চুক্তি অনুযায়ী, কেবল জার্মান পোস্টাল সার্ভিসের কর্মীরাই এই অনুষ্ঠান শুনতে পেতেন। দেশটির অন্য নাগরিকদের জন্য রেডিও শোনা নিষিদ্ধ ছিলো। প্রথম রেডিও অনুষ্ঠানে শব্দের গুণগত মান ছিলো বেশ খারাপ।

১৯২৩ সালের ২৯ অক্টোবর জার্মানিতে জনসাধারণের জন্য প্রথম আনুষ্ঠানিক রেডিও অনুষ্ঠান প্রচার শুরু হয়। এর আগেই নিষেধাজ্ঞা উঠে গিয়েছিল এই প্রচারের ওপর থেকে। রেডিও অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে লেখক ও কবিদের মধ্যে উৎসাহ দেখা দেয়। তৈরি হয় শ্রোতাদের জন্য নতুন নতুন গল্প, কবিতা।

এখন স্মার্টফোনের জন্য অনেকেই রেডিও শোনেন কানে ইয়ারফোন দিয়ে। অথচ ১৯২০ সালেই রেডিও শ্রোতারা হেডফোনে রেডিও শুনতেন।

সেসময় জার্মানির অর্থনীতির অবস্থা বেশ খারাপ। বড় শহরগুলোতে দারিদ্রের ছাপ। জার্মানির ‘ফাদার অব রেডিও’ খ্যাত হানস ব্রেডভের মতে, এসবের মধ্যেই রেডিও যেনো মানুষকে মুক্তির পথ দেখালো। 

১৯২৩ সালের ডিসেম্বরে রেডিওর শ্রোতা ছিলো মাত্র ৪৬৭ জন। মাত্র এক বছর পর শ্রোতার সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যায়। ১৯৩২ সালে রেডিও শোনার জন্য অর্থ দিয়ে গ্রাহক হয়েছিলেন ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ। প্রথম বছর দিনে মাত্র এক ঘন্টার অনুষ্ঠান ছিলো। ১০ বছর পর প্রতিদিন ১৫ ঘন্টার অনুষ্ঠান শুরু হয়।

তবে সবাই যে রেডিওকে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন এমনটা নয়। অনেক বুদ্ধিজীবী ও শিল্পী এই মাধ্যমকে ভালো চোখে দেখেননি। 

১৯২৩ সালে রেডিওতে কোন সাংবাদিক, ঘোষক, প্রতিবেদন ছিলো না। কিন্তু তখনও আনেক বিজ্ঞাপন প্রচার হতো। ১৯২৯ সালে প্রথম রেডিওতে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন সাংবাদিক।

‘ট্রিসটান্ড উন্ড ইসোলডে’ গীতিনাট্যটি বিশ্বজুড়ে ২০০ স্টেশনে একযোগে প্রচার হয়েছিল, যা রেডিওর ইতিহাসে প্রথম।

রেডিওর এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়েছিলো জার্মানির নাৎসি সরকার। ইহুদিবিরোধী প্রচারণায় প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল রেডিও। ১৯৩৩ সাল থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত এটা ছিলো নাৎসিদের অন্যতম হাতিয়ার।

 

খবর সূত্র: ডয়েচে ভেলে