’জামাল খাসোগিকে হত্যার অনুমোদন দিয়েছিলেন সৌদি প্রিন্স’


’জামাল খাসোগিকে হত্যার অনুমোদন দিয়েছিলেন সৌদি প্রিন্স’

সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান নির্বাসিত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার অনুমোদন দিয়েছিলেন বলে যুক্তরাষ্ট্রর এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার বাইডেন-প্রশাসন এই সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। 

সেখানে বলা হয়, তুরস্কের ইস্তানবুলে গিয়ে খাসোগিকে "ধরতে বা খুন" করতে যে অভিযান চালানো হয়েছিল, যুবরাজ মোহাম্মদ সেই পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছিলেন। তবে, সৌদি আরব এই প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে যে এটি "নেতিবাচক, মিথ্যা এবং অগ্রহণযোগ্য"। দেশটির কার্যত শাসক প্রিন্স মোহাম্মদও এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে তার জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েকজন সৌদি নাগরিকের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও খোদ যুবরাজের ওপর এমন কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। সৌদি আরব এই প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে যে এটি "নেতিবাচক, মিথ্যা এবং অগ্রহণযোগ্য"।

খাসোগি যখন তুরস্কের ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেটে গিয়েছিলেন তখনই তাকে হত্যা করে তার দেহ খণ্ড বিখণ্ড করা হয়। ৫৯ বছর বয়সী এই সাংবাদিক একসময় সৌদি সরকারের উপদেষ্টা এবং রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তবে এক পর্যায়ে তিনি সব আনুকূল্য হারান এবং ২০১৭ সালে নিজেই যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসনে চলে যান। সেখান থেকে তিনি ওয়াশিংটন পোস্টে একটি মাসিক কলাম লিখতেন, যেখানে তিনি যুবরাজ মোহাম্মদের নীতির সমালোচনা করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, "আমরা ধারণা করছি সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ইস্তানবুলে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগজিকে গ্রেফতার বা হত্যার জন্য একটি অভিযানের অনুমোদন দিয়েছিলেন,"

গোয়েন্দা প্রতিবেদনটিতে এমন ধারণার পেছনে তিনটি কারণ উল্লেখ করা হয়।

প্রথমত; ২০১৭ সাল থেকে সৌদি আরবের সব সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রিন্স মোহাম্মদের একক নিয়ন্ত্রণ।
দ্বিতীয়ত; ওই অভিযানে প্রিন্স মোহাম্মদের একজন উপদেষ্টা ও প্রতিরক্ষা দলের সদস্যের সরাসরি সম্পৃক্ত থাকা।
তৃতীয়ত; বিদেশে নির্বাসনে থাকা ব্যক্তিদের মুখবন্ধ রাখতে সহিংস পদক্ষেপ গ্রহণের পক্ষে প্রিন্স মোহাম্মদের সমর্থন দেয়া।

প্রতিবেদনে খাসোগির হত্যার সাথে জড়িত বা দায়ী ব্যক্তিদের নাম দেওয়া হয়েছে। তবে এতে বলা হয়েছে, "খাসোগির ক্ষতি করার পরিকল্পনায় আর কারা কারা সামিল ছিল সেটা এখনও আমরা পুরোপুরি জানি না।

সৌদি কর্তৃপক্ষ এই হত্যার পেছনে একদল এজেন্টকে দোষারোপ করছে, যারা বিরোধীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছিল। এছাড়া সৌদি আদালত প্রাথমিকভাবে পাঁচ ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিলেও বিচারক সেই সাজা কমিয়ে প্রত্যেককে ২০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।

জাতিসংঘের বিশেষ দূত অ্যাগনেস ক্যালামার্ড অভিযোগ করেন, সৌদি আরব ইচ্ছাকৃতভাবে এবং আগে থেকে পরিকল্পনা করেই খাসোগিকে হত্যা করেছে। সেইসঙ্গে এ ঘটনায় সৌদি আরবের আদালত যে রায় দিয়েছে তা "ন্যায়বিচারের পরিপন্থী" উল্লেখ করে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতিমালার আওতায় সৌদি আরবের ৭৬ নাগরিকের ওপর ভিসা সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর সেই সব ব্যক্তি এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে, যাঁরা কোনো দেশের সরকারের পক্ষে নির্বাসিত বা নির্বাসিত হতে পারেন এমন সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্ট বা অন্য ব্যক্তিকে নিপীড়ন, হয়রানি, নজরদারি, হুমকি বা ক্ষয়ক্ষতিসহ গুরুতর কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন বা দেশের বাইরে গিয়ে ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কাজ করবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পরররাষ্ট্রমন্ত্রী টনি ব্লিনকেন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমাদের সীমান্তের মধ্যে সবার নিরাপত্তার স্বার্থে, অন্য কোনো দেশের সরকারের পক্ষে অপরাধীরা নির্বাসিতদের টার্গেট করে আমেরিকার মাটিতে ঢুকতে পারবে না।’

বাইডেন প্রশাসন জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের সঙ্গে ভবিষ্যতে সম্পর্ক কেমন দেখতে চায়, সেই সুস্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে।

তবে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় সৌদি যুবরাজ প্রিন্স মোহাম্মদের নাম রাখা হয়নি। এ বিষয়ে মার্কিন অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত কোনো দেশের শীর্ষ নেতার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে না।’