বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস


বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস

সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার মৌলিক নীতিমালা অনুসরণ, বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মূল্যায়ন, স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ প্রতিহত করার শপথগ্রহণ এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ক্ষতিগ্রস্ত ও জীবনদানকারী সাংবাদিকদের স্মরণ ও তাঁদের স্মৃতির প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপনে যে দিবসটি ঘোষনা করে জাতি সংঘ তা  গণমাধ্যম দিবস হিসাবে পালন করে আসছে পুরো বিশ্ব। আজ সেই ৩ মে বিশ্বগণমাধ্যম দিবস।

প্রতি বছরই বিভিন্ন প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালিত হয়। এবার দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘তথ্য জনগণের পণ্য। এ বছরও করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যেও দিবসটি পালন করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয় থেকে মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের একটি বার্তা প্রচার করা হয়।

জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘উইন্ডহোক ঘোষণার ৩০ বছর’ শীর্ষক বাণীতে বলা হয়, ‘কোভিড-১৯ মহামারির সময় আমরা বিশ্বব্যাপী যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছি- সেগুলো জীবন বাঁচাতে, শক্তিশালী ও স্থিতিশীল সমাজ গঠনে নির্ভরযোগ্য, যাচাইকৃত এবং সর্বজনীন ভূমিকাকে চিহ্নিত করে। মহামারি এবং জলবায়ুর জরুরি অবস্থাসহ অন্যান্য সংকটময় সময়ে সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমকর্মীরা ক্ষতিকর ভুল এবং মিথ্যাচারকে মোকাবিলাসহ আমাদের দ্রুত পরিবর্তিত ও প্রায়ই অপ্রতিরোধ্য তথ্যের দৃশ্যপট তুলে ধরতে সহায়তা করে’।
সেই বাণীতে আরও বলা হয়, সাংবাদিকতা হলো একটি গণসম্পদ। মহামারির অর্থনৈতিক প্রভাব অনেক প্রচার মাধ্যমকে কঠোরভাবে আঘাত করেছে, যা তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। এছাড়া বাজেট সংকটের সঙ্গে সঙ্গে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়াও কঠিন হচ্ছে। এ শূন্যস্থান পূরণ করতে গুজব, মিথ্যা এবং চূড়ান্ত বা বিভাজিত মতামত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি সব সরকারকে তাদের ক্ষমতানুযায়ী একটি মুক্ত, স্বাধীন এবং বহুমুখী প্রচার মাধ্যমকে সমর্থন করার জন্য সবকিছু করার আহ্বান জানাচ্ছি।
জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ভুল তথ্য এবং অপপ্রচাররোধে মুক্ত এবং স্বাধীন সাংবাদিকতা আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। জাতিসংঘ সাংবাদিক নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মপরিকল্পনার লক্ষ্য হচ্ছে, বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা। কারণ তথ্য হচ্ছে একটি গণসম্পদ। আজ আমরা একটি মুক্ত, স্বাধীন এবং বহুত্ববাদী আফ্রিকান সংবাদমাধ্যম উন্নয়নের জন্য উইন্ডহোক ঘোষণাপত্রের ৩০তম বার্ষিকী উদযাপন করছি।
দিবসটি উপলক্ষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক বিবৃতিতে বলেছে, কোভিড-১৯ অতিমারিকালে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের পেশাগত ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি আরও প্রকট হয়েছে। বহু গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অসংখ্য সাংবাদিক চাকুরিচ্যুত কিংবা পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছেন। তাই মুক্ত গণমাধ্যম এবং তথ্যের অবাধ প্রবাহের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে অবিলম্বে স্বাধীন ও পেশাদার গণমাধ্যমের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। আজ সোমবার বিকেল ৩টায় মানবাধিকার সংগঠন 'নাগরিক'-এর আয়োজনে 'কোভিড অতিমারি, সংবাদপত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা' শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এই আলোচনায় অংশ নেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক, শিল্পী, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টরা।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস প্রতি বছর ১৮০টি দেশের সাংবাদিকতার ক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ করে মুক্ত গণমাধ্যমের তালিকা প্রকাশ করে। সম্প্রতি ২০২১ সালের ২০ এপ্রিল সংস্থাটি সর্বশেষ সূচক প্রকাশ করে।

সর্বশেষ প্রকাশিত বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫২ 
মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বিগত পাঁচ বছরের ন্যায় ১৮০ টি দিশের মধ্যে শীর্ষে এবারও নরওয়ে আর সূচকে ২ ধাপ পিছিয়ে সবার শেষে আছে ইরত্রিয়া। 
গতবছরের তুলনায় সূচকে বাংলাদেশ এবছর আরও এক ধাপ পিছিয়েছে। বাংলাদেশ যে শুধু পিছিয়েছে, তা-ই নয় প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে। এ অঞ্চলে মুক্ত সাংবাদিকতার তালিকায় ৬৫ নম্বর অবাস্থানে থেকে রয়েছে শীর্ষে ভুটান। এরপরই আছে মালদ্বীপ দেশটির অবস্থান ৭৯। তালিকায় নেপালের অবস্থান গতবছের চেয়ে ৬ ধাপ এগিয়ে ১০৬, আফগানিস্তান ১২২, শ্রীলঙ্কা ১২৭, মিয়ানমারের অবস্থান ১৪০, ভারত ১৪২ এবং পাকিস্তান ১৪৫। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণমাধ্যম কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে, তার ভিত্তিতে ২০০২ সাল থেকে আরএসএফ এই সূচক প্রকাশ করে আসছে।